ঠিকমতো জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারেননি এই ব্যক্তি, এই 'অপরাধ'-এ দেশ থেকে বিতারিত করা হয়েছিল তাঁকে ...
আজকাল | ১৮ জুন ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের জাতীয় সঙ্গীত সঠিকভাবে গাইতে না পারায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানা এলাকার এক যুবককে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল মুম্বাই পুলিশ এবং বিএসএফের বিরুদ্ধে। যদিও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবং মুর্শিদাবাদ পুলিশের তৎপরতায় বিএসএফ এবং বিজিবি-র মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের পর দু'দিন আগে তিনি দেশে ফিরতে পেরেছেন। মঙ্গলবার ওই ব্যক্তি ভগবানগোলার হোসেননগরে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তার আগে এদিন ভগবানগোলা থানায় তাঁকে পুলিশের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি মুম্বাই পুলিশ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে মুর্শিদাবাদের চার যুবক-মেহবুব শেখ, নাজিমউদ্দিন মন্ডল, শামীম খান এবং মিনারুল শেখকে গ্রেপ্তার করে। মেহবুবের বাড়ি ভগবানগোলায়, নাজিমুদ্দিন ও শামীমের বাড়ি হরিহরপাড়া এবং মিনারুল বেলডাঙার বাসিন্দা । গ্রেপ্তারির পর মুম্বাই পুলিশ তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তরফে ধৃতদের বাগডোগরা বিমানবন্দরে এনে কোচবিহারের একটি সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে তাঁদের পরিজনরা বাংলাদেশে আটকে থাকার কথা জানতে পেরে বিষয়টি পুলিশের নজরে আনেন। এরপরেই রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা যোগাযোগ করেন বিএসএফের সঙ্গে। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দার সঙ্গে বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল শেখও বাংলাদেশ থেকে নিরাপদে ভারতে ফিরে এসেছেন।
এসডিপিও (ভগবানগোলা) বিমান হালদার বলেন,'চলতি মাসের ৯ তারিখ মেহবুবকে মুম্বাইয়ে কানাকিয়া থানা আটক করেছিল। পরে বিএসএফ ওই ব্যক্তিকে বাংলাদেশে 'পুশ ব্যাক' করে দেয়। ১৩ জুন এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়ে জেলা পুলিশ পদক্ষেপ করে। বিএসএফ এবং বিজিবি মধ্যে 'ফ্ল্যাগ মিটিং'-এর পর এদিন মেহবুব নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন।'
হোসেনপুরে ফিরে মেহবুব জানান, 'মুম্বাইতে আমি পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। একদিন কাজের শেষে রাস্তার পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। সেই সময় হঠাৎই মুম্বাই পুলিশ এসে আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। তাদেরকে আমি আমার সমস্ত ভারতীয় নথি দেখাই। কিন্তু পুলিশ আমার নথিগুলো পরীক্ষা না করে উত্তরবঙ্গ দিয়ে আমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।'
তাঁর অভিযোগ,'পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করার পর ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেছিল। আমি পড়াশোনা অতটা জানি না। তাই জাতীয় সঙ্গীত ভালো ভাবে গাইতে পারিনি। সেজন্য আমাকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে। কোনোভাবে ফোনে আমাদের পঞ্চায়েত প্রধানকে বিষয়টি জানাই। শেষপর্যন্ত রাজ্য পুলিশের তৎপরতায় আজ আমি নিজের বাড়ি ফিরতে পেরেছি। '
প্রায় একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন হরিহরপাড়ার শামীম খান। তিনি বলেন, 'আমি কোনদিন স্কুলে যাইনি, তাই জাতীয় সঙ্গীত পুরোপুরি গাইতে পারি না। মুম্বাইয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। বাংলায় কথা বলতে দেখে হঠাৎ একদিন মুম্বই পুলিশ এসে আমাকে গ্রেপ্তার করে। আমাকেও জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলা হয়েছিল।'
শামীম দাবি করেন ,' আমি আমার ভারতীয় হওয়ার সমস্ত নথি পুলিশকে দিই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাকে বাংলাদেশি সন্দেহে প্রথমে পুনের বিএসএফ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে বিমানে বাগডোগরা নিয়ে যায় বিএসএফ। এরপর একটি ছোট গেট পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বারবার বলা সত্বেও আমাদের কথা বিএসএফ শুনতে চায়নি । গোটা একটি দিন আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরাঘুরি করি।' ওই যুবক দাবি করেন, এখনও এক ভারতীয় মহিলা এবং একটি বাচ্চা বাংলাদেশেই রয়ে গেছে। তাদেরও আমাদের সঙ্গে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
গোটা বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক এন কে পাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে এবিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তিনি প্রতিক্রিয়া দিলে পরে সেটি প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।