মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দলেরই একাংশ। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে সিদ্দিকুল্লাকে না চাওয়ার স্লোগান তুলে ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমেছেন কর্মীরা। যেখানে দেনুর পঞ্চায়েতের প্রধান উপপ্রধানরাও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এবার আবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কণ্ঠেও বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে উঠেছে । 'মন্তেশ্বরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাচৌধুরী নিজের বিধানসভা এলাকার কোনও কর্মসূচিতে যোগদান করেন না। আসার কোনও প্রয়োজনই মনে করেন না।' মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন নিজ দলেরই মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহম্মদ হোসেন শেখ।
রবিবার ২১ জুলাইয়ের সমর্থনে মন্তেশ্বর বাজারে এক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। তৃণমূলের এই সম্মেলনে বিজেপি ও সিপিএম সমর্থিত তিনশো পরিবার তৃণমূলে যোগদান করে বলে জানানো হয় দলের তরফে। যোগদানকারীদের মধ্যে বিজেপি-সিপিএমের পঞ্চায়েত ভোটের ৭টি বুথের প্রার্থীরা এদিন তৃণমূলে যোগদান করেন বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এতে সংগঠন আরও মজবুত হল। কিন্তু এদিনের কর্মসূচিতেও অধরা ছিলেন বিধায়ক ।
কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আহম্মদ হোসেন শেখ বলেন, মন্তেশ্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মন্তেশ্বর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যবস্থাপনায় একুশে জুলাই শহিদ স্মরণে সভাকে সাফল্যমন্ডিত করার উদ্দেশ্যেই মন্তেশ্বর ব্লকের ১৩ টি অঞ্চলে প্রধান, উপপ্রধান সহ দুলীয় নেতৃত্ব দের নিয়ে এই কর্মী সম্মেলন। সামনে একুশে জুলাই সামনে রেখে কর্মীরা কীভাবে ধর্মতলায় পৌঁছাবেন সেই বিষয়ে আলোচনা হয়। উনি বলেন, দলীয় কর্মীদের জন্য ১০০-র বেশি বাস নেওয়া হয়েছে। যাতে দলীয় কর্মীরা সঠিক সময়ে এবং নিরাপদে ধর্মতলায় সভায় পৌঁছতে পারেন। পাশাপাশি এই কর্মিসভায় সিপিএম ও বিজেপি থেকে প্রায় ৩০০টি পরিবার যোগদান করেন তৃণমূল কংগ্রেসে। বিরোধী দল থেকে আসা তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদানকারী কর্মীদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ আহমেদ হোসেন। এই কর্মী সভায় বিধায়কের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, 'কেন আপনারা প্রশ্ন করছেন, উনি মন্তেশ্বর বিধানসভার দলীয় কোন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকেন ? এই বিষয়ে ওনার কাছেই জানতে চাইবেন কেন উপস্থিত নেই, এই বিষয়ে উনিই বলতে পারবেন।' তিনি আরও বলেন, 'বিধায়ক মন্তেশ্বর ব্লকের কোনও কর্মসূচিতে যোগদান করেন না। উনি কোনও কর্মসূচিতেই আসেন না। উনি তো প্রয়োজনই মনে করেন না।'
অবশ্য মন্তেশ্বরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লার বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ এদিনই প্রথম নয়। এদিকে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ইতিমধ্যেই কালনা থেকে সরাসরি ঘোষণা করে দিয়েছেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি মন্তেশ্বর বিধানসভায় দাঁড়াবেন ও জয়লাভ করবেন। তারপর থেকেই দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ সামনে এসে পরে । কয়েকদিন আগেই 'সিদ্দিকুল্লাকে চাই না' বলে মন্তেশ্বরের দেনুড়ে স্লোগান তুলে পথে নামেন তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধানরা। বিধায়ক তথা মন্ত্রীকে দলের কর্মীদের ক্ষোভের কথা জানালে তিনি অবশ্য বলেন সারা বাংলা তাঁকে চায় । তাই এখানে কে কী চাইলো তা ধর্তব্যের মধ্যে থাকে না। তবে দলীয় গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি তথা রাজ্য নেতা দেবু টুডু বলেন,বড় দল হলে মতানৈক্য থাকে। আর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কে টিকিট পাবে সেটা নির্ভর করছে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। তাই এখন থেকে লাফিয়ে বিক্ষোভ করে কোনও লাভ নেই।