• দিনভর বাস ধর্মঘটে নাকাল আরামবাগের নিত্য যাত্রীরা
    এই সময় | ১৭ জুন ২০২৫
  • এই সময়, আরামবাগ: বাস স্ট্যান্ড ফাঁকা। নেই একটাও লোকাল ও দূরপাল্লার বাস। অথচ থিক থিক করছেন নিত্যযাত্রীরা। সরকারি বাস চললেও, ভিড়ে ঠাসাঠাসি। ঠেলাঠেলি করে বাসের ভিতরে উঠলেও নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

    রাস্তায় প্রচুর অটো, টোটো-সহ চার চাকার অন্যান্য গাড়ি। সপ্তাহের প্রথম দিন। সোমবার। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, বাজারহাট, দোকান সবই খোলা ও অন্যান্য দিনের মতো সচল। কিন্তু গন্তব্যে যাওয়ার মতো বাস নেই।

    স্থানীয় ভাবে যেতে হলে টোটো, অটো বা ম্যাজিক বা মারুতি ভ্যানের চাহিদা বেশি। যে পথ দশ টাকা বা কুড়ি টাকায় যাওয়া যায়, এ দিন তারই মূল্য প্রায় দেড়শো বা দুশো। মাথায় হাত নিত্যযাত্রীদের।

    সারাদিন এই ভাবে দর কষাকষি করেই অতিবাহিত হয়েছে অধিকাংশ নিত্যযাত্রীর। সপ্তাহের প্রথম দিনে বাস ধর্মঘটে এ ভাবেই নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ।

    সকাল থেকেই আরামবাগ বাস টার্মিনাসে বাসের দেখা নেই, যেখানে প্রত্যেকদিন দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর–সহ কলকাতাগামী এক্সপ্রেস ও স্থানীয় রুটে প্রায় ৫০০–র বেশি বাস চলাচল করে।

    সকাল থেকে বাস ধর্মঘট হওয়ায় নিত্যযাত্রীরাও সংস্থার সম্মুখীন। বিভিন্ন জেলা থেকে আরামবাগমুখী নিত্যযাত্রীরা যেমন সমস্যায় পড়েছেন, সেই ভাবেই হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, আদালত, অফিসগামী যাত্রীরাও সমস্যায় পড়েছেন।

    বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, রাজ্য সড়কে টোটো, অটোর দাপটে তারা বাস ধর্মঘট করতে বাধ্য হয়েছে। বার বার প্রশাসনের কাছে দরবার করেও কোনও কাজ হয়নি।

    তবে এ দিন সরকারি বাস চলেছে। তাতে ভিড়ে ঠাসাঠাসি। পাশাপাশি, মারুতি ভ্যান, টোটো, অটো–সহ অন্যান্য চার চাকার যান চলেছে।তবে এ দিন যে, যে ভাবে পেরেছে, মুনাফা লুটে নিয়েছে।

    বর্ধমানের খন্ডঘোষ এলাকায় বাড়ি পুর্ণিমা সিং–এর। তিনি আরামবাগের মহেশপুরে কালীপুজো দেখতে এসেছিলেন দিদির বাড়িতে। সোমবার বাড়ি ফেরার জন্য আরামবাগ বাস স্ট্যান্ডে আসেন।এসে শোনেন যে, বাস বন্ধ।

    কোলে শিশুপুত্র, সঙ্গে বৃদ্ধা শাশুড়ি মা। এঁদের নিয়ে কোথায় যাবেন, কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, কিছুই জানেন না। যে রাস্তা যেতে তাঁদের সবার ভাড়া লাগে মাত্র সত্তর বা আশি টাকা, সেই রাস্তাতেই মারুতি বা অন্য কোনও চার চাকা গাড়ি হাঁকছে পাঁচশোর বেশি।

    ঘাটালের জামালপুরের বাসিন্দা নাজির মোল্লাও বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু কী ভাবে, তা জানা নেই।প্রাইভেট কারে ভাড়া চাইছে ৮০০ টাকা, যা দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁর।

    এই ভাবেই বাস ধর্মঘটকে কাজে লাগিয়ে ও সেই সুযোগে দেদার ভাড়া নিয়ে মুনাফা লুটে নিল অটো, টোটো বা ম্যাজিক কিংবা মারুতি ভ্যান। আর অসহায় হয়ে রোদে পুড়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য প্রহর গুনলেন হাজার হাজার যাত্রী।

    এই বিষয়ে আরামবাগ বাস, মিনিবাস অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদিকা মধুমিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা প্রথমেই সবার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইছি। একটু মানিয়ে নিন। কিন্তু অন্যায় যে হচ্ছে, তার প্রতিবাদ করুন।

    আমরা বলেছি, প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে বাস যায় না, সেখানে অটো বা টোটো চলুক। প্রধান সড়কে যেন টোটো, অটো না চলে। শহরের ভিতরে চলুক অটো, টোটো, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাস রুটে যেন না চলে।

    আজই হুগলিতে একটি বৈঠক হয়। সমস্ত আধিকারিক, সব অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা হাজির ছিলেন। বৈঠকে ওঁরা আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের। মান্যতা দিয়েছেন আমাদের দাবিকে। ১৭ জুন থেকে ওঁরা যৌথ ভাবে পথে নামবেন।

    মনিটর করবেন। তাই আমরা আগামী ১০ দিন এটা লক্ষ করব। দেখা হবে, সত্যিই ওঁরা কী করছেন। সিদ্ধান্তমতো কাজ না হলে, আগামী ২৭ জুন থেকে ফের গোটা জেলাজুড়ে ধর্মঘট হবে এবং তা হবে দীর্ঘমেয়াদি। আপাতত মঙ্গলবার থেকেই ফের বাস চালু থাকবে।’

  • Link to this news (এই সময়)