• ‘জঙ্গি হামলায় অভিযুক্তরা জীবিত না মৃত?’ কেন্দ্রের ‘নীরবতা’ নিয়ে খোঁচা অভিষেকের, কী বলছে সিপিএম-কংগ্রেস?
    এই সময় | ১৬ জুন ২০২৫
  • ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য আছে-থাকবে। কিন্তু দলের স্বার্থের হাজার কদম আগে থাকবে দেশের স্বার্থ।’ — বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে ইন্দোনেশিয়া, একাধিক দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এবং পাকিস্তানের দ্বিচারিতা নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্যও তুলে ধরেছেন তৃণমূল সাংসদ। তবে পহেলগাম জঙ্গি হামলা প্রমাণ করেছে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ‘বড় ফাঁক’ রয়ে গিয়েছে, সে কথা সোমবার মনে করিয়ে দিলেন তিনি। প্রশ্ন তুললেন, ‘পহেলগামের জঙ্গি হামলায় অভিযুক্ত চার জঙ্গি কোথায়? তারা জীবিত না মৃত?’ কেন্দ্রকে বিঁধে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘এই বিষয়ে কেন কেন্দ্রীয় সরকার সদুত্তর দিচ্ছে না। তারা নীরব কেন?’

    সীমান্তের ও পারে জঙ্গি নিকেশ হলেও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় কেন্দ্রের গাফিলতি কেন? প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, ‘চার জঙ্গি কী ভাবে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছিল? জাতীয় নিরাপত্তায় এত বড় ফাঁক থেকে যাওয়ার কারণে যে ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হল, তার দায়ই বা কে নেবে?’ বাহওয়ালপুর থেকে মুরিদকের ঘাঁটিগুলিতে লস্কর ও জইশের একাধিক জঙ্গি নিকেশ হয়েছে। তবে যে চারজন এই জঙ্গি হামলায় (পহেলগাম) যুক্ত, তাদের পরিণতি কী? তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, ‘যদি তাদের নিকেশ করা হয়ে থাকে, তা হলে সরকার কেন স্পষ্ট বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে?’ তৃণমূলের আরেক সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘অভিষেক যতটা না সাংসদ হিসেবে এই প্রশ্ন তুলেছেন, তার থেকে বেশি সাধারণ নাগরিক হয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন।… গোটা দেশ অপেক্ষা করে আছে এই উত্তরগুলি পাওয়ার জন্য।’

    অভিষেকের বক্তব্যকে কার্যত সমর্থন করেছে প্রদেশ কংগ্রেসও। পহেলগাম ও পরবর্তীতে অপারেশন সিঁদুরের পর সংসদে বিশেষ অধিবেশনের আর্জি জানিয়েছিল কংগ্রেস। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘বাইরের শত্রু যখন আমাদের দেশে আক্রমণ চালায়, তখন রাজনীতিকে আমরা অগ্রাধিকার দিই না। কিন্তু দেশের সীমানা পেরিয়ে ৪০০ কিমি ভেতরে ঢুকে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে জঙ্গিরা সাধারণ মানুষকে মেরে দিল, সেখানে কেন নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিল? কী ভাবে এত বড় ঘটনা ঘটল? প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার উত্তর দিতে হবে।’ এই ধরনের ঘটনার পরেই সংসদের যৌথ অধিবেশনে সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিরোধীদের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন? প্রশ্ন কংগ্রেসের।

    তবে বিদেশের মাটিতে অভিষেকের বক্তব্য কি বিজেপি বা আরএসএস প্রভাবিত? প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, জাপানে অভিষেক যা বলেছেন, তার পুরো ভিডিয়ো প্রকাশ করা হোক। দেখবেন বিজেপি ও তৃণমূল সাংসদের কথার মধ্যে কোনও তফাৎ নেই।’ বিজেপির থেকেও একধাপ এগিয়ে গিয়ে আরএসএসের বক্তব্য পেশ করেছেন অভিষেক, দাবি করেন সেলিম।

    অভিষেকের এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপিও। এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক প্রশ্ন তুললেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তা করেননি কেন? প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ তথা বিদেশে ভারতের সংসদীয় দলের সদস্য শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তো দেখা করেছিলেন। ১০ তারিখ প্রধানমন্ত্রী সব সাংসদদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে প্রশ্ন করেননি কেন? দেশের হয়ে বিদেশে গিয়ে ভালো ভালো কথা বললেন, আর এখানে এসে দেশকে আক্রমণ করছেন? এতে কি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মুখ উজ্জ্বল হচ্ছে?’

    রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘আমাদের দেশে রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেক রাজনীতিক রয়েছেন, যাঁরা পরিবারগতভাবে রাজনীতি করছেন। যোগ্যতা বিন্দুমাত্র নেই। তাঁরা মনে করেন, বিদেশ নীতি নিয়ে দু-চার কথা না বললে পরিণত হওয়া যায় না। তাই নাক গলাচ্ছেন।’ সংসদের আগামী অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র সদুত্তর দেবে বলেও দাবি করেন তিনি। সুকান্তর কথায়, ‘যেভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর করে আমরা জবাব দিয়েছি, সেই ভাবে দেশের বিরোধীদের গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জবাব দেবেন।’

    সুকান্ত মজুমদারের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘পরিবার থেকে যে কেউ রাজনীতিতে এসে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন। বিজেপি দলের এরকম অনেকেই রয়েছেন।... এসব বলার আগে ওঁর দলকে যে সব প্রশ্ন করা হয়েছে, তার জবাব দিক, তা হলে ওঁর রাজনীতিতে পরিপক্কতা প্রমাণ হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)