ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পহেলগাঁও হামলার পর ৫৫ দিন কেটে গিয়েছে। এখনও হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয়নি। কীভাবে নিরাপত্তার জাল কেটে জঙ্গিরা ঢুকেছিল? কীভাবেই বা পালাল? সেই ঘটনার তদন্ত কতটা এগলো? সেসব নিয়ে বিভিন্ন মহলে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। যদিও কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও বার্তা আসেনি। সেসব বিষয়ে ফের কেন্দ্রকে নিশানা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে পহেলগাঁও কাণ্ড বিষয়ে পাঁচটি প্রশ্ন তুললেন তিনি।
পহেলগাঁও ইস্যুতে বিশেষ অধিবেশন চেয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধীরা। কিন্তু সেই কথায় আমল দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। বাদল অধিবেশনই এরপর হবে। সেই কথা কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। অভিষেকের এদিনের পঞ্চবাণ আগামী দিনে বিরোধীদের বক্তব্য হয়ে উঠবে। এই প্রশ্নে বিদ্ধ হবে মোদি সরকার। এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। শুধু তাই নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই টুইট কীর্তি আজাদ, সুস্মিতা দেব, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, শশী পাঁজা, ব্রাত্য বসুরা রিটুইট করে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর তাঁকে খুব একটা বেশি কেন্দ্রকে নিশানা করে সরব হতে দেখা যায়নি বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। সেখানে অভিষেকের এদিনের প্রশ্নবাণ জাতীয় রাজনীতিতে আগামী দিনে ঝড় তুলতে পারে। তাহলে কি কেন্দ্রকে নিশানা করতে বিরোধী মুখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই? সেই কথাও মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, চার সন্ত্রাসী কীভাবে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে ২৬ জন নিরীহ নাগরিককে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিল? জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের দায় কার? যদি এটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা হয়, তাহলে কেন গোয়েন্দা ব্যুরো প্রধানের মেয়াদ এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল? তাও আবার এই জঙ্গি হামলার মাত্র এক মাস পরেই? জবাবদিহি করার বদলে কেন তাঁকে ‘পুরস্কৃত’ করা হল?
ভারত সরকার অভিষেক-সহ বিরোধী নেতাদের, সাংবাদিক, বিচারকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। সেক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদীদের নেটওয়ার্ক এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তেমন কিছু ব্যবহার করতে বাধা কী? সেই প্রশ্নও তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ। অভিষেকের আরও প্রশ্ন, মাত্র এক মাস পরেই কেন পাকিস্তানকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস দমন কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হল? নরেন্দ্র মোদি সরকার গত ১০ বছরে বিদেশনীতিতে ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে বলে খবর। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বিদেশনীতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
পহেলগাঁও হামলায় অভিযুক্ত চার সন্ত্রাসবাদী কোথায়? তারা জীবিত নাকি মৃত? সেই বিষয়ে কেন কেন্দ্রীয় সরকার কোনও স্পষ্ট বিবৃতি দিচ্ছে না? কেন এই নীরবতা? পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর ভারত কবে পুনরুদ্ধার করবে? সেই প্রশ্নও এদিন তুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তান হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় সীমান্ত এলাকায়। তারই পালটা আক্রমণ চালায় ভারত। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ভারত, পাকিস্তান দুই দেশই সংঘর্ষবিরতির পথে হাঁটবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত সরকার সংঘর্ষবিরোধীর কথা জানিয়েছিল। ট্রাম্প বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন, কেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই দাবির জবাব দেয়নি? কেন দেশের মানুষের আবেগকে অবহেলা করা হয়েছিল? সেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক।
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সরকার ৩৩টি দেশে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে ঘটনার বার্তা দিয়েছিল। সেই প্রতিনিধি দলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন। অভিষেক এদিন প্রশ্ন তুলেছেন, সেই সফরের পর কতগুলি দেশ ভারতকে স্পষ্ট সমর্থন করেছে? অভিষেকের আরও প্রশ্ন, “আমরা যদি সত্যিই বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হই, তাহলে পহেলগাঁও হামলার পরপরই কেন আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্ক পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন এবং ৪০ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ অনুমোদন করেছিল? সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে বারবার জড়িত একটি দেশ কীভাবে কেবল আন্তর্জাতিক তদন্ত এড়াতে পারেনি, বরং পুরস্কৃতও হয়েছিল?”