• বাড়ছে গ্যাসের দাম, কদর বাড়ছে ঘুঁটের
    এই সময় | ১৬ জুন ২০২৫
  • এই সময়, মেদিনীপুর: সাত সকালে মা-ঠাকুমাদের উনুন ধরানোর রেওয়াজ এখন আর নেই। মাটির উনুনের জায়গা নিয়েছে রান্নার গ্যাস। স্টিলের গ্যাসস্টোভে দেশলাই জ্বাললেই গনগনে আঁচ। এখন আর পাখার বাতাস দিয়ে উস্কে দিতে হয় না উনুনের আগুন।

    হেঁসেলের সুবিধে হয়েছে অনেক। কিন্তু এর জেরে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির উনুন আর ঘুঁটে। তবে, যে হারে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে তাতে গ্রামের অনেক বাড়িই ঘুঁটে জ্বালিয়ে উনুন ধরানো শুরু করেছে। ঘুঁটের বাজার আবার ফিরছে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।

    এক সময়ে উনুনে আঁচ দিতে ঘুঁটে ছিল আবশ্যিক উপাদান। কয়লা আর ঘুঁটে উনুনের উপরে সাজিয়ে আঁচ দেওয়া হতো। গোবরের সঙ্গে খড় অথবা ধানের তুস মিশিয়ে গোল আর চ্যাপ্টা আকৃতির তৈরি হতো এই ঘুঁটে।

    মূলত গ্রামাঞ্চলেই মহিলারা ঘরে বসে এগুলি তৈরি করতেন। মাটির বাড়ির দেওয়ালে বা ইটের পাচিলে এই গোবর আর খড়ের মিশ্রণ দিয়ে ঘুঁটে দিতেন তাঁরা। কেউ নিজের হেঁসেলের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ তৈরি করতেন। আবার কেউ তা বাইরে বিক্রিও করতেন।

    বেশ পরিশ্রমও লাগত ঘুঁটে দিতে। কিন্তু রান্নার গ্যাস আসার পরে গ্রামেগঞ্জেও ঘুঁটের চল অনেক কমে গিয়েছে। তবে একেবারে হারিয়ে গিয়েছে বলা যায় না। অনেক গ্রামে এখনও ঘুঁটে দেন মহিলারা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের বসনচক গ্রামের বাসন্তী দোলই প্রতিদিন দু'-তিন ঝুড়ি গোবর নিয়ে ঘুঁটে তৈরিতে বসেন।

    তাঁর কথায়, ‘সবসময় গ্যাস বা কাঠ কেনার ক্ষমতা হয় না। তাই বাড়ির গোরুর গোবর সংগ্রহ করে তা থেকেই জ্বালানির ব্যবস্থা করি। এতে খরচও বাঁচে, আবার পরিবেশও দূষণমুক্ত থাকে।’ বাসন্তীর মতো অনেকেই বলেন, প্রতিটি মহিলার হাতের ছোঁয়ায় খুঁটের আকার-আকৃতি বদলে যায়, ফলে একেকজনের তৈরি ঘুঁটে একেক রকমের হয়।

    দাসপুর, কেশপুর, ডেবরা, সবং, পিংলা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু অঞ্চলে এখনও ঘুঁটে তৈরির রীতি প্রচলিত। শহরে রান্নার গ্যাস আর ইনডাকশনের ব্যবহার বাড়লেও গ্রামে এখনও বহু মানুষ ঘুঁটেকেই বেছে নেন কম খরচের টেকসই জ্বালানি হিসেবে।

    এখন অনলাইনেও ঘুঁটে বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। একাধিক ই-কমার্স সংস্থা খুঁটে বিক্রি করছে। গ্রামাঞ্চলে মহিলারা এখনও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

    জ্বালানি হিসেবে ঘুঁটে যেমন কার্যকরী, তেমন এটি পরিবেশবান্ধবও। তেল বা গ্যাসের তুলনায় এতে কার্বন নিঃসরণ অনেক কম। যখন বিশ্ব জুড়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন এই ঘুঁটে আবারও হতে পারে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির এক সহজলভ্য উপায়।

  • Link to this news (এই সময়)