সুকান্ত মজুমদারকে হাওয়াই চটির দোকান খোলার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সোমবার বিধানসভায় বিজেপি বা সুকান্ত, কারওর নাম না করেই তিনি আক্রমণ শানিয়েছেন দু’পক্ষকে। মমতা বলেন, ‘হাওয়াই চটি এত পছন্দ করলে, হাওয়াই চটির দোকান খুলুন।’ পাল্টা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তার জবাব দিয়েছে বিজেপিও।
শিখ পুলিশ অফিসারের দিকে হাওয়াই চটির কাটআউট ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে। তবে সুকান্ত শুধু বিজেপির রাজ্য সভাপতি নন, তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও। এই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন সুকান্তকে ‘হাফ মিনিস্টার’ বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘একজন হাফ মিনিস্টার আমার পাড়ার মোড়ে গিয়ে একজন পাঞ্জাবি অফিসারের পাগড়িতে জুতো ছুড়েছেন।’ এরপর মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারিও দেন, ‘আমার বাড়িতে আপানারা এলে, আপনার বাড়িতেও আমরা যেতে পারি।’
গত বৃহস্পতিবার আমেদাবাদে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। এখনও পর্যন্ত ২৭৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ঠিক তার পর দিন অর্থাৎ শুক্রবার হাওয়াই চটি কাণ্ড ঘটে। মমতার মন্তব্য, ‘আমেদাবাদের ঘটনায় আমরা সবাই শোকের মধ্যে রয়েছি। আর সেই সময় ওই হাফ মিনিস্টার আমাদের পাড়ায় গিয়ে পাগড়িতে হাওয়াই চটি ছুড়ছেন।’
বিজেপির ছোট-বড়-মেজ নেতারা তৃণমূলকে ‘চোর’ কটাক্ষ করে থাকেন হামেশাই। এ দিন তা নিয়েও ফুঁসে ওঠেন মমতা। জোরের সঙ্গে বলেন, ‘সারাক্ষণ চোর বলছেন, আপনারা তো ডাকাত, গদ্দার। আমি দু’বার রেলমন্ত্রী ছিলাম। সব ফাইল রয়েছে। কিছু খুঁজে পেয়েছেন আজ পর্যন্ত? এই ভাবে যদি সারাক্ষণ অপমান, অসম্মান করেন তাহলে ২০২৬ সালে বিধানসভায় আপনারা শূন্য হয়ে যাবেন।’
মমতার হাওয়াই চটি আক্রমণ নিয়ে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তারপর কিছুটা নির্লিপ্ত ভাবে বলেন, ‘হাওয়াই চটি হোক কিংবা স্নিকার্স, এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আর কোনও আগ্রহ নেই।’ মমতাকে বাংলার মানুষ ‘প্রবল ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে’ বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মহেশতলা। অবাধে চলেছিল ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি। আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশও। পরের দিন মহেশতলা রওনা দেন সুকান্ত। কিন্তু রাস্তাতেই তাঁকে আটকে দেয় পুলিশ। বাধা পেয়ে মমতাকে তুলসী গাছ দিতে কালীঘাটে যেতে চান সুকান্ত। তৎক্ষণাৎ তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় হাওয়াই চটির কাটআউট ছোড়েন তিনি। অভিযোগ, তা গিয়ে লাগে শিখ ধর্মাবলম্বী এক পুলিশ কর্মীর পাগড়িতে। রবিবার সুকান্তর বিরুদ্ধে FIR দায়ের করেছে বিভিন্ন জেলার গুরুদ্বার কমিটি। যদিও সুকান্ত জানিয়েছেন, তাঁকে এক পুলিশকর্মী ঠেলে দিয়েছিল, তাই হাওয়াই চটির কাটআউট ওই অফিসারের পাগড়িতে লাগে।
তবে শুধু সুকান্ত নন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুভেন্দু অধিকারী এক শিখ পুলিশ অফিসারকে খালিস্তানি বলে কটাক্ষ করেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই নিয়েও উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলা। অনশনে বসেছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ। এবার সুকান্তর বিরুদ্ধে উঠল অভিযোগের আঙুল।