শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট
কবিকে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। তবে এখন সেই নাটোরও নেই, আর বনলতাও উধাও। আছে শুধুই ক্রমবর্ধমান গরম। সূর্য যেন ওই বিজ্ঞাপনের মতো পাইপ দিয়ে শুষে নিচ্ছে সমস্ত এনার্জি। এমতাবস্থায় একটু শান্তি, একটু স্বস্তি দিতে পারে কে? এসি।
তবে সবার সেই সামর্থ কিংবা সুযোগ সব সময়ে থাকে না। তাহলে উপায়? এটিএম বুথ। গরম বাড়তেই জেলার এটিএম বুথগুলিতে ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে বাইরে থেকে অনেক লোক দেখে বলছেন, ‘বাবাহ! এত লাইন!’ ভিতরে ঢুকতেই তাজ্জব বনে যাচ্ছেন তাঁরা। এই ভিড় টাকা তোলার বা ফেলার নয়। এ ভিড় স্বস্তির।
এমনিতে বনস্পতিকে আর মনে পড়ে না কারও। যন্ত্র সভ্যতায় বৃক্ষকে ‘রিপ্লেস’ করেছে এসি। কবি হোক বা কেরানি, টোটোচালক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সকলকে শান্তি দিচ্ছে এই মেশিন। তবে সব সময়ে তো সামর্থ কিংবা সুযোগ থাকে না।
কাজের সূত্রে বাইরে বেরোতেই হয়। তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে বাঁচতে বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথে আশ্রয় নিচ্ছেন বাসিন্দারা। অনেকে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছেন।
এমনও দেখা গিয়েছে, দুপুরে বাড়ি থেকে বালিশ-চাদর নিয়ে এসে এক ঘুসে বিকেল পার করে দিচ্ছেন কিছু বাসিন্দা। সামনে এটিএম থাকলেও টাকা হাতাচ্ছে না কেউ। এতে ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা হচ্ছে না? কিছুটা হচ্ছে বটে।
কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্মীরাও বুঝছেন পরিস্থিতি কোন জায়গায় পৌঁছেছে। তবে ভিড় সামলাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে বৈকি। বাড়ছে বিদ্যুতের খরচও।
বালুরঘাটের একটি এটিএম বুথে আশ্রয় নিয়েছিলেন শহরের বাসিন্দা আদিকান্ত সরকার, প্রলয় সরকার, চায়না দেবনাথরা। সকলেই একসুরে বললেন, ‘বাজার করতে এসে অস্বস্তি হচ্ছিল। ভীষণ গরম। তাই কিছুক্ষণ এটিএম বুথে ঢুকে শীতল হাওয়ায় বসে থাকলাম। গরম একটু কমলেই চলে যাব।’
এমন ভিড় আগে দেখেনি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তবে অমানবিক হতে চান না বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুরের একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজারেরা। তাঁদের কথায়, ‘মানুষজনের এমন অসুবিধা দেখে কিছু বলার ইচ্ছা হয় না। বিদ্যুৎ খরচ বাড়ছে ঠিকই। তবে কাউকে বের করে দেওয়া সম্ভব নয়।’
পুলিশের তরফেও এ নিয়ে কড়াকড়ি নেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, ‘ব্যাঙ্কের যদি কোনও আপত্তি না থাকে, আমাদেরও কিছু বলার নেই।’