অর্ঘ্য ঘোষ, ময়ূরেশ্বর
না, আমের আর পাঁচটা প্রজাতির মতো ‘বিডিও স্যর’ কোনও প্রজাতি নয়। তবুও বিখ্যাত সব আমের সঙ্গে ময়ূরেশ্বরের ঘরে ঘরে সমোচ্চারিত হয় ওই ‘আম নাম’।
ময়ূরেশ্বরে ঘুরতে এলে আপনাকে দেওয়া হতে পারে ‘বিডিও স্যর’-এর আম। কী সেটা? এক সময়ে ময়ূরেশ্বর-২-এর বিডিওর উদ্যোগে প্রতিটি গ্রামে অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকা ছাপোষা মধ্যবিত্তের এক চিলতে উঠোন থেকে সম্পন্ন গৃহস্থের ডাঙা-ডহর কিংবা পুকুর পাড়ে বহু আমগাছ লাগানো হয়েছিল। সেই গাছে এখন আম ঝুলছে। ওই সব আমকে গ্রামবাসী ডাকেন ‘বিডিও স্যর’-এর আম বলে।
ব্লক প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১–এ ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে গ্রামে গ্রামে আমগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন তদানীন্তন বিডিও তথা বর্তমান অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) বাবুলাল মাহাতো।
উদ্দেশ্য ছিল, মূলত ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, অনাবাদী জমি কাজে লাগানো, উদ্বৃত্ত ব্যক্তি আয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা। সেই উদ্দেশ্যে ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতে আম্রপালি, হিমসাগর এবং মল্লিকা প্রজাতির প্রায় এক লক্ষ আমগাছ লাগানো হয়েছিল।
প্রশাসনের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছিল চারাগাছ, জৈব সার, বেড়া তৈরির খরচ, এমনকী, গাছ লাগানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে মজুরিও। বিডিও নিজে নিয়মিত ওই সব গাছ পরিদর্শন করেছেন। বছর দুয়েকের মাথায় সেই সব গাছ থেকে ফলন মিলতে শুরু করে।
ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রসুনপুরের সমাজকর্মী প্লাবন মণ্ডলদের কাঠা ছয়েক জমি অনাবাদী হয়ে পড়েছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় সেখানে ১৫টি করে আমগাছ লাগানো হয়। তাঁরা বলেন, ‘প্রতি বছর প্রায় ৬ কুইন্টাল আম পাওয়া যায়। নিজেরা খাওয়ার পরে প্রতিবেশী-আত্মীয়দের দিয়েও শেষ হয় না বিডিও স্যরের আম।’
বাড়ির এক চিলতে উঠোনে ৩-৪টি করে আমগাছ লাগিয়েছিলেন ভূধরপুরের সুদাম বাগদি, বাসুদেব ধীবররা। তাঁরা বলেন, ‘এ বারও জামাইষষ্ঠীতে বিডিও স্যরের আম জামাইয়ের পাতে দেওয়া হয়েছে। ভাগ্যিস তখন গাছগুলো লাগিয়েছিলাম। নইলে এই সময়ে আমের দাম আগুন হয়ে যায়।’
শুধু ব্যক্তিগত জায়গাতেই নয়, ছামনা গ্রামে অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকা ট্রাস্টিবোর্ডের প্রায় ৬ বিঘে পুকুরপাড়ে ৫২৩টি গাছ লাগানো হয়। তার মধ্যে ৫০০টি টিকে রয়েছে।ট্রাস্টিবোর্ডের অন্যতম সদস্য প্রতুল ঘোষ, কৌশিক ঘোষরা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় দুর্গা এবং লক্ষ্মী-জনার্দন পুজো হয়। আগে পুজোর খরচ নিয়ে সমস্যা হতো। এখন বিডিও স্যরের আম বিক্রি করে খরচের অনেকটা সংস্থান হয়ে যায়।’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রমোদ রায় বলেন, ‘বিডিও স্যরের সৌজন্যে এখন প্রতিটি গ্রামেই অনেক বাড়িতে আমগাছ দেখা যায়। যাঁদের আম কিনে খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না, তাঁরাও বিডিও স্যরের আমের স্বাদ পাচ্ছেন।’
বাবুলাল মাহাতো বলেন, ‘ওই ব্লকের মানুষজন আমের স্বাদের পাশাপাশি বাড়তি দু’পয়সার মুখ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন জেনে ভালো লাগছে। সে দিনের শ্রম সার্থক মনে হচ্ছে।’