নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বরানগর: চেষ্টা করেছিলেন আগেও। দু’বার। কিন্তু কোনওবারই পর্ন মাফিয়া শ্বেতা খানের জাল ছিঁড়ে বেরতে পারেননি সোদপুরের নির্যাতিতা। সেদিন এসেছিল সুযোগ। আকণ্ঠ মদ্যপানের পর বেসামাল শ্বেতা প্রায় বেহুঁশ অবস্থায় পড়েছিল বিছানায়। তখন ভোররাত। আর ‘যখের ধনে’র মতো আগলে রাখা মূল গেটের চাবি? সে ফেলে রেখেছিল ডাইনিংয়ে। ‘অরক্ষিত’ অবস্থায়। সেই চাবি হাতে পেয়েই ‘মৃত্যুপুরী’ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন নির্যাতিতা। এখনও বাঁকড়ায় শ্বেতা খানের বাড়ির দিনগুলো মনে পড়লেই শিউরে উঠছেন তিনি। পরিবার জানিয়েছে, এখনও তাদের মেয়ে ওই আতঙ্ক থেকে বেরতে পারেনি।
এখনও সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিতে চাইলেও পরিবারের দাবি মেনে তাঁকে আরও কয়েকদিন রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরজুড়ে নির্যাতনের ছাপ দেখলে যে কেউ কেঁপে উঠবে। হাত ও পায়ের আঙুল ছাড়াও শরীরে একাধিক জায়গায় ফ্র্যাকচার রয়েছে। তবে তা সময়ের নিয়মে জোড়াও লাগছে। নির্যাতিতার ভাই বলেন, ‘শনিবার দুপুরে হাসপাতালে এসে হাওড়া কমিশনারেটের পুলিস দিদির সঙ্গে কথা বলে গিয়েছে। দিদি জানিয়েছে, আগেও দু’বার ওই ঘর থেকে বের হতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ধরা পড়ে যায়। তারপর চলে অকথ্য অত্যাচার। এবার শ্বেতা মদ খেয়ে বেসামাল হয়ে ভোররাতে বাড়ি ফিরেছিল। ভুল করে ঘরের মূল দরজার চাবি ডাইনিংয়ে রেখেই ঘুমাতে চলে গিয়েছিল। সেটা দেখেছিল দিদি। বাধা ছিল একটাই—সিসি ক্যামেরা। কিন্তু দিদি জানত, ওর সুইচ কোথায়। সেটা ও প্রথমে বন্ধ করে। তারপর চাবি নিয়ে দিনের আলো ফোটার আগেই ওই কারাগার থেকে বেরিয়ে পড়ে।’ ভাই আরও জানিয়েছে, ‘দিদিকে মানালি নিয়ে গিয়েছিল ওরা। সেখানেই মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। ওই আঘাতের পরও নিস্তার পায়নি দিদি। হাসিমুখে রিল শ্যুটিংয়ে বাধ্য করেছিল। ফিরে আসার পর অত্যাচার আরও বাড়ে। বলেছিল, বারে নাচতে হবে। শ্বেতার ছেলেকে বিয়ে করতে হবে। দিদি মানেনি। তাতে নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়েছিল।’
যে ঘরে সোদপুরের তরুণীর উপর নির্যাতন চালানো হতো, শনিবার গভীর রাতে সেখানে শ্বেতা ও তার ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে যায় পুলিস। শ্বেতাকে দিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়। বাঁকড়ার ‘মক্ষীরানি’ দেখিয়েছে, কীভাবে অত্যাচার করা হয়েছে ওই তরুণীর উপর। কাঁচি দিয়ে যথেচ্ছভাবে কাটা হয়েছে চুল। শ্বেতা জানিয়েছে, ওই তরুণীর ছবি কয়েকজন ‘কাস্টমারে’র কাছে পাঠিয়েছিল সে। তাদের পছন্দ হওয়ার পর অনলাইনে অগ্রিমও নিয়ে নেয়। কলকাতার কাস্টমারদের জন্য শহরের কোনও হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। আর বাইরের রাজ্যের যারা আগ্রহ দেখিয়েছিল, তাদের বলা হয়েছিল মুম্বই আসতে। কিন্তু সোদপুরের তরুণীকে রাজি করানো যায়নি। তাতে আক্রোশ আরও বেড়ে যায়। বিদ্যুতের শকও দেওয়া হয়। এর জন্য অবশ্য আলাদা একটি ঘর ছিল শ্বেতার। কথা না শুনলে, বা পর্ন শ্যুটিংয়ে না নামলে বহু তরুণীরই এই পরিণতি হতো। দেওয়া হতো সিগারেটের ছেঁকাও। শ্বেতার এই ফ্ল্যাটেও নিয়মিত পর্ন ছবির শ্যুটিং হয়েছে।