বাংলায় কথা বলায় ‘বাংলাদেশি’ তকমা! ভারতীয় নাগরিকদেরই জোর করে বাংলাদেশে পুশব্যাক
বর্তমান | ১৬ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, বিধাননগর, বহরমপুর ও সংবাদদাতা, বনগাঁ: তাঁরা সকলেই ভারতীয় নাগরিক। সরকারি বৈধ নথিপত্রও রয়েছে। একটাই অপরাধ, তাঁরা বাংলায় কথা বলেন! তাঁরা বাঙালি! তাই তাংদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে পুশব্যাক করা হল বাংলাদেশে! সীমান্তে দাঁড়িয়ে কাতর আকুতি জানিয়েছিলেন তাঁরা। বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতীয়, পশ্চিমবঙ্গের লোক।’ কোনও কথা শোনেনি বিএসএফ। অভিযোগ, জোর করে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই বেনজির ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তবে কি বাংলা বলাটাই অপরাধ? এই প্রশ্নে কাঠগড়ায় বিএসএফ তথা কেন্দ্রীয় সরকার। কেন তাঁদের নথি যাচাই না করে এই পুশব্যাক, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আপাতত রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ থেকে চারজনকে ভারতে ফেরানো হয়েছে। এখনও আরও দু’-তিনজনকে ফেরানো বাকি। আর একজনের হদিশই নেই।
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার হোসেননগরের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মেহেবুব শেখ, হরিহরপাড়ার তরতিপুরের নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, বেলডাঙার বেগুনবাড়ি কাজিশাহ এলাকার মিনারুল শেখ এবং পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মোস্তাফা কামাল মহারাষ্ট্রে কাজে গিয়েছিলেন। মুম্বই পুলিস তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়েছিল। গত শনিবার উত্তরবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে পাঠায়। অভিযোগ, তাঁরা বাংলাদেশে যেতে না চাইলে রীতিমতো মারধরও করা হয়। পুশব্যাকের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। রাজ্যের হস্তক্ষেপে পুলিস বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। মুর্শিদাবাদের পুলিস সুপার কুমার সানি রাজ জানিয়েছেন, রবিবার বিকেলে কোচবিহার সীমান্ত দিয়ে ওই চারজনকে দেশে ফেরানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদেরই একজনের এখনও কোনও খোঁজ নেই।
অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার হরিহরপুরের বাসিন্দা ফাজের মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী তসলিমা মণ্ডল মুম্বইয়ে কাজে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, একইভাবেই মুম্বই পুলিস তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে। বিএসএফ তাঁদেরও বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। শনিবার তাঁদের পরিবারে বাংলাদেশের বিজিবি থেকে ফোন আসে। বিজিবি-কে পরিবারের সদস্যরা নথিপত্রও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আর খোঁজ মেলেনি ওই দম্পতির। ফাজেরের বাবা তাহাজুল মণ্ডল বলেন, ‘ছেলে বাংলায় কথা বলেছে বলে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ বাগদার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর বলেন, ‘সমস্ত নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও কেন ওই দম্পতিকে বাংলাদেশে পাঠানো হল? বাংলার বিরোধিতা করতে ভোটের আগে এসব করা হচ্ছে।’ রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১০ জুন আমাদের কাছে খবর আসে, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব বর্ধমান থেকে মুম্বইতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়া কয়েকজনকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিস। আমাদের তরফে ওই শ্রমিকদের সমস্ত তথ্য মুম্বই পুলিসকে দেওয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের কিছু না জানিয়ে পাঁচ শ্রমিককে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওঁদের ফিরিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কয়েকজনকে ফেরানো হয়েছে। বাকিদেরও ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘শুধুমাত্র মাতৃভাষা বাংলা হওয়ার কারণেই কি এই বৈষম্য ও বিদ্বেষ? বাংলা ভাষায় কথা বললেই কি বাংলাদেশি? এটা খুবই বেদনাদায়ক ও নিন্দনীয়।’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিএসএফ কোনও ভুল কাজ করে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আসলে কী ঘটনা ঘটেছে, সেটা বিএসএফ কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে।’ বিএসএফের এক আধিকারিককে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার দেখছে।’