নাবালকের রহস্য মৃত্যুতে চাঞ্চল্যকর মোড়, পরকীয়ার জেরেই খুন ধৃত কাকু ও সৎ মা
বর্তমান | ১৬ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, বেলদা: দাঁতনের তুরকাতে নাবালকের রহস্য মৃত্যু চাঞ্চল্যকর মোড় নিল। সিলিং ফ্যানে গলার নলি কেটে দুর্ঘটনার তত্ত্ব ধোপে টিকল না। শেষমেশ পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ল সৎ মা ও কাকু। সৎ মা ও কাকুকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলায় নৃশংসভাবে খুন হতে হল ওই নাবালককে। ঘটনায় সৎ মা ও কাকুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। শনিবার সকালে তুরকা গ্রামে ইকবাল বক্স নামে ১৩ বছরের এক নাবালকের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয় বাড়িতেই। ঘটনার পর ওই নাবালকের সৎ মা সহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন রাতে সিলিং ফ্যানে লেগে গলা কেটে মৃত্যু হয়েছে ইকবালের। কিন্তু প্রথম থেকেই ঘটনায় খটকা লাগে পুলিসের। তদন্তে দেখা যায়, নাবালকের গলা ছাড়া আর কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। পাশাপাশি বাড়ির যে উচ্চতায় সিলিং ফ্যানটি রয়েছে সেখানে ওই নাবালকের গলা পৌঁছনো সম্ভব নয়। তদন্তে নাবালকের সৎ মা সানোয়ারা বিবির বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। রাত্রি প্রায় বারোটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটলেও কেন পরিবারের বাকি সদস্যদের বিষয়টি দেরি করে জানানো হয়, তা নিয়ে তৈরি হয় সন্দেহ। সৎ মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। লাগাতার জেরায় অবশেষে খুনের কথা স্বীকার করে সৎ মা।
পুলিসকে সে জানায়, রাতে ইকবাল ও তার দেওরের ছেলেকে নিয়ে নিজের রুমে শুয়েছিল সে। রাতে রুমে আসে দেওর বাবুজি বক্স। দু’জনে সেখানেই ঘনিষ্ঠ হয়। আর তাদের সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলে ছোট্ট ইকবাল। ঘটনা নিজের ঠাকুমাকে জানিয়ে দেবে বললে ঘর থেকে সেই মুহূর্তে বেরিয়ে যায় তার কাকা বাবুজি। এরপর ইকবাল ফের বিছানায় শুয়ে পড়লে কিছুক্ষণ পরে একটি ছুরি নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢোকে বাবুজি। বিছানায় ইকবালের বুকের উপর চেপে বসে গলার নলি কেটে দেয়। নিঃশব্দে কাজ সেরে ফেলা হয়। তারপর খাড়া করা হয় এই দুর্ঘটনার তত্ত্ব। সকালে সেভাবেই পরিবারের বাকি সদস্যদের এই ঘটনার কথা জানায় ইকবালের সৎ মা।
মৃত নাবালকের বাবা রবিউল কাজের সূত্রে মুম্বইতে থাকেন। রবিউলের দুই ছেলে। বড় ছেলে তাঁর সঙ্গে থাকে। প্রথম পক্ষের স্ত্রী খুশবুর সঙ্গে বছর চারেক আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর সানোয়ারাকে বিয়ে করে রবিউল। তুরকাতে সৎ মায়ের সঙ্গে থাকত ছোট ছেলে ইকবাল।
ঘটনার খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে মুম্বই থেকে দাঁতন থানায় আসেন ওই নাবালকের বাবা রবিউল ও মা খুশবু। পুলিসের কাছে অভিযোগ দায়ের করে মৃত ওই নাবালকের মা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সৎ মা সানোয়ারা বিবি ও দেওর বাবুজি বক্সকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের সোমবার আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাদের জেরা করে খুনের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে চায় পুলিস।