ফায়ার সেফ্টি সার্টিফিকেট জমা না করলে রোগীদের ভর্তি বন্ধ
বর্তমান | ১৬ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: হলফনামা জমা দিয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস সার্টিফিকেট জমা করেনি অনেক নার্সিংহোম। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ এনিয়ে ১০টি নার্সিংহোমকে শোকজ চিঠি পাঠিয়েছেন। কাঁথি, হেঁড়িয়া, বাজকুল এবং চণ্ডীপুরের মোট ১০টি নার্সিংহোমে শোকজ চিঠি পৌঁছে গিয়েছে। এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ না করলে নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এনিয়ে ওই নার্সিংহোমগুলির কর্তৃপক্ষের ঘুম ছুটে গিয়েছে। তারা এনিয়ে স্বাস্থ্যভবন পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ করছে বলে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ অসিত দেওয়ান বলেন, ফার্স্ট ক্লাস জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে হলফনামা জমা করে বেশকিছু নার্সিংহোম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। এজন্য কেউ চার মাস আবার কেউ ছ’মাস সময় নিয়েছিল। অথচ, তাদের দেওয়ার সময়সীমা পার করে গেলেও এখনও অন্তত ১০টি নার্সিংহোম ওই সার্টিফিকেট জমা দিতে পারেনি। তাই এক মাসের সময়সীমা দিয়ে সতর্কীকরণ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরপর রোগীভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যজেলার অধীন প্রায় ৪০টি নার্সিংহোম রয়েছে। তারমধ্যে বেশিরভাগ নার্সিংহোম কাঁথি এবং চণ্ডীপুরে অবস্থিত। এছাড়াও কিছু হেঁড়িয়া এবং বাজকুলে রয়েছে।
গত ৯জুন চণ্ডীপুরের এড়াশালের একটি নার্সিংহোমের কর্ণধারকে অফিসে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। ধরানো হয়েছে শোকজ চিঠিও। অভিযোগ, ওই নার্সিংহোম কর্ণধার গত ২৩এপ্রিলের মধ্যে ফায়ার সেফটির ফাইনাল সার্টিফিকেট জমা করবেন বলে হলফনামা দিয়েছিলেন। কিন্তু, তারপর কোনও পদক্ষেপ করেননি। তাই অফিসে তাঁকে তলব করে সতর্ক করা হয়েছে। একইভাবে হেঁড়িয়ার একটি নার্সিংহোমের কর্ণধারকে শোকজ করেছেন নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ। ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ হলফনামা দিয়ে এবছর ২৯জানুয়ারির মধ্যে ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসের সার্টিফিকেট জমা দেবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু, তারা সময়মতো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়নি। পরিকাঠামো গড়ে না তোলায় সার্টিফিকেটও জমা করতে পারেনি। এই অবস্থায় ৯জুন ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অফিসে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। ধরানো হয়েছে শোকজ চিঠি। এক মাসের মধ্যে সার্টিফিকেট জমা না করলে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। বাজকুলের একটি নার্সিংহোমকেও শোকজ চিঠি ধরানো হয়েছে। দমকল বিভাগ থেকে ওই নার্সিংহোমের এনওসি নেই বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিস এবং ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ থেকে ভূপতিনগর থানায় অভিযোগ করা হয়। তারভিত্তিতে গত ২জুন ওই থানার ওসি বাজকুলের ওই নার্সিংহোমের কর্ণধারকে থানায় তলব করেছিলেন। কাঁথির বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমও অগ্নিসুরক্ষা বিধি নিয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রত্যেক নার্সিংহোম ও হাসপাতালের ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ, অগ্নি নির্বাপনের মতো জরুরি বিষয়ের সঙ্গে আপোস করছে এই জেলার অনেক নার্সিংহোম। অগ্নি নির্বাপণ নিয়ে শোকজের মুখে পড়া হেঁড়িয়ায় নার্সিংহোমের কর্ণধার সৌরভ বাগ বলেন, আমাদের নার্সিংহোমে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে। অগ্নি নির্বাপণ ইস্যুতে শোকজের মুখে পড়া চণ্ডীপুরের এড়াশালের নার্সিংহোমের কর্ণধার তাপসকুমার বেরা বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যাসোসিয়েশন লড়াই করছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে গোটা বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।