• পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশে পুশব্যাক, পুলিসের উদ্যোগে ফিরে এল দেশে
    বর্তমান | ১৬ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: রোজগারের আশায় মহারাষ্ট্রে কাজে গিয়ে অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে চরম হেনস্তার শিকার হলেন বাংলার চার পরিযায়ী শ্রমিক। ভারতীয় সমস্ত পরিচয়পত্র দেখালেও তাঁদের জবরদস্তি বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই শ্রমিকরা বিএসএফের বিরুদ্ধে নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। এঘটনায় রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন মুর্শিদাবাদ ও একজন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা। অবশেষে এরাজ্যের পুলিসের উদ্যোগে বিএসএফের সঙ্গে কথা বলে রবিবার বিকেলে তাঁদের দেশে ফেরানো হয়।

    ভগবানগোলা থানার হোসেননগরের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মেহেবুব শেখ, হরিহরপাড়ার তরতিপুরের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, বেলডাঙার বেগুনবাড়ি কাজিশাহ এলাকার মিনারুল শেখ ও পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মোস্তফা কামাল মহারাষ্ট্রে কাজে গিয়েছিলেন। মুম্বই পুলিস তাঁদের বাংলাদেশি মনে করে সরাসরি বিএসএফের হাতে তুলে দিয়েছিল। চারজনের কাছেই ভারতীয় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড সহ জমি-বাড়ির দলিলের তথ্য ছিল। কিন্তু বিএসএফ সেসব অগ্রাহ্য করে শনিবার শিলিগিুড়ি থেকে তাঁদের বাংলাদেশ সীমান্তে পুশব্যাক করে। অভিযোগ, তাঁরা সীমান্ত পেরতে না চাইলে বেধড়ক মারধর করা হয়। ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলে সেখানকার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে শ্রমিকরা বিএসএফের উপর নির্মম অত্যাচারের অভিযোগ তোলেন। শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ এলাকার থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিস নড়েচড়ে বসে। জেলার যে তিন শ্রমিককে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে, তাঁদের সমস্ত তথ্য জোগাড় করে বিএসএফকে পাঠানো হয়। পুলিস আধিকারিকরা তড়িঘড়ি তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেন। মুর্শিদাবাদের পুলিস সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, বিএসএফের সঙ্গে বারবার কথা বলে শ্রমিকদের সমস্ত পরিচয়পত্র ও নথি পাঠানোর পর তাঁদের দেশে ফেরাতে পেরেছি। রবিবার বিকেলে কোচবিহার সীমান্ত দিয়ে চারজনকে দেশে ফেরানো হয়। আমরা তাঁদের ফেরার জন্য মুর্শিদাবাদ থেকে গাড়ি পাঠিয়েছি।

    রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও চারজনকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। ভেরিফিকেশন করে তাঁদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই পাওয়া গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাঁদের ফেরানো হচ্ছে। কিন্তু এরাজ্যের সরকারকে না জানিয়ে বিএসএফ কীভাবে তাঁদের পুশব্যাক করে? বিএসএফ ও মহারাষ্ট্র সরকার ভেরিফিকেশনই বা কেন করেনি? এজন্য বিএসএফের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

    বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক লাল্টু দাস বলেন, মহারাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশিদের ধরার বিষয়ে খুব তৎপর। এরাজ্যের সরকারের মধ্যে সেই তৎপরতা দেখা যায় না।

    পরিযায়ী শ্রমিক নাজিমুদ্দিন মণ্ডলের স্ত্রী পিঙ্কি খাতুন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় স্বামী ফোন করে জানায়, বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁকে আটক করা হয়েছে। আমরা কী করব বুঝতে না পেরে থানার দ্বারস্থ হই। হরিহরপাড়ার শাসকদলের জেলা পরিষদ সদস্য জিল্লার রহমান বলেন, এই এলাকার এক শ্রমিক সহ জেলার তিনজনকে বিএসএফ বাংলাদেশে পাঠিয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে, কোন তথ্যের ভিত্তিতে বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশি মনে করল-তার তদন্ত হওয়া দরকার। মহারাষ্ট্র সরকারও কেন জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে ওই শ্রমিকদের সরাসরি বিএসএফের হাতে তুলে দিল-তার জবাব দিতে হবে। 

     মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার তিন শ্রমিককে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেওয়া হয়েছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)