ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, ধান গাছে শিষ বেরোতে শুরু করতেই গাছের ওপরের অংশ শুকিয়ে যেতে থাকে। অনেক খেতে শিষ তৈরির আগে তা পুড়ে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই রোগটি ব্যাপকআকারে ছড়িয়ে পড়ে। বহু জমিতে এখন দাঁড়িয়ে থাকা ধান গাছের শিষ একেবারেই ফাঁকা।
স্থানীয় কৃষক রশিদুল হক বলেন, ঋণ করে চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম, ধান বিক্রি করে ঋণ শোধ করব। কিন্তু শিষই যদি না হয়, তাহলে কীভাবে শোধ করব? সামনে তো আবার রবি মরশুমের চাষ আছে, তার খরচই জোগাড় করতে পারছি না।
সূত্রের খবর, কৃষকরা ইতিমধ্যেই ব্লক কৃষি দপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, শুরুর পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না মেলায় ফসল বাঁচানো যায়নি।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, নেকব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত রোগ যা আদ্র আবহাওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক সময়ে প্রতিরোধ না নেওয়া হলে পুরো ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোচবিহার জেলা কৃষি দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর অসিতবরণ মণ্ডল জানিয়েছেন, বিষয়টি দিনহাটা-১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক জানেন এবং ইতিমধ্যেই কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কীভাবে রোগটি প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে লিফলেট বিলি করা হয়েছে। তাঁর মতে, এই রোগকে অনেকে নেকব্লাস্ট বলেন। একবার নেকব্লাস্ট হয়ে গেলে তা প্রতিরোধ করার উপায় থাকে না। এর আগেই, অর্থাৎ লিফব্লাস্ট পর্যায়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। দিনহাটা-১ ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তা কাজলকুমার বর্মন বলেন, মূলত বীজ থেকেই এই রোগ ছড়াতে পারে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক সমস্যার কথা জানিয়ে এসেছেন। আমরা তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি। যাঁদের শস্যবীমা রয়েছে, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
এই বিপুল ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ এবং কৃষিঋণ মুকুব করতে হবে। একইসঙ্গে, আগামী মরশুমে যাতে এই রোগ যাতে না ছড়ায়, তারজন্য আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।