• আজ থেকে তিনমাস জঙ্গলে ঢুকতে পারবেন না পর্যটকরা
    বর্তমান | ১৬ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: আজ, সোমবার থেকে তিনমাস জঙ্গলে ঢুকতে পারবেন না পর্যটকরা। ফলে বন্ধ থাকবে এলিফ্যান্ট কিংবা কার সাফারি। প্রজননের সময়ে বন্যপ্রাণীরা যাতে কোনওভাবে বিরক্ত না হয়, সেজন্য প্রতিবছরই এই তিনমাস পর্যটকদের জঙ্গলে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফের পর্যটকদের জন্য জঙ্গল খুলবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। তবে এই তিনমাস জঙ্গলের বাইরে বনদপ্তরের যে ইকো কটেজগুলি রয়েছে, সেখানে থাকতে পারবেন পর্যটকরা। 

    তিনমাস পর জঙ্গল খুললেই দুর্গাপুজো। ওই সময় ডুয়ার্সে ভিড় বাড়বে পর্যটকদের। ফলে পুজোর আগেই ধূপঝোরায় এলিফ্যান্ট ট্যুরিজম হাব তৈরির কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে বনদপ্তর। গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, ধূপঝোরাকে আমরা এলিফ্যান্ট ট্যুরিজম হাব হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ওখানে ছ’টি কটেজ আছে। সেগুলি সংস্কারের পর খুলে দেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক আলোর পরিবর্তে সৌরবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে কটেজগুলিতে। ধূপঝোরায় পিলখানাও রয়েছে। সেখান থেকে এলিফ্যান্ট রাইড হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য ওখানে সেলফি জোন করা হচ্ছে। এছাড়াও পর্যটকরা যাতে সেখানে হাতির স্নান দেখতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদিকে, জঙ্গল বন্ধ থাকাকালীন চোরাশিকারিরা যাতে কোনওভাবে হানা দিতে না পারে, সেজন্য কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে রবিবার জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি। জলদাপাড়ায় বর্তমানে ৩৩১টি একশৃঙ্গ গন্ডার রয়েছে। গোরুমারায় গন্ডারের সংখ্যা ৬১টি। হাতির সংখ্যা কয়েকশো। ফলে বুনোদের সুরক্ষিত রাখাই যে এখন বনদপ্তরের অন্যতম চ্যালেঞ্জ, তা স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্য বনপাল। তিনি বলেন, কুনকির পিঠে চড়ে জঙ্গলে টহল দেওয়ার পাশাপাশি ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চলবে। 

    বনদপ্তর সূত্রে খবর, মহানন্দা, গোরুমারা, জলদাপাড়া ও বক্সার জঙ্গলে নজরদারিতে উড়বে পাঁচটি ড্রোন। চোরাশিকারিদের হানা রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে ভারী বর্ষায় যাতে বন্যপ্রাণীরা ভেসে না যায়, সেজন্যও ব্যবস্থা নিয়েছে বনদপ্তর। কোনও এলাকা থেকে বন্যপ্রাণীর ভেসে যাওয়ার খবর মিললে যাতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেটিকে উদ্ধার করা যায়, সেজন্য রাখা হয়েছে বোট। তাছাড়া জঙ্গলের কোর এলাকায় তৈরি করা হয়েছে মনসুন ক্যাম্প। সেখান থেকেই গভীর জঙ্গলে নজরদারি চালাবেন বনকর্মীরা। উত্তরবঙ্গর মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বলেন, জলদাপাড়ায় নদী ও ঝোরার সংখ্যা বেশি। সেখানে তিনটি বোট রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম। 

    জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর দিয়ে অসংখ্য পাহাড়ি ঝোরা  গিয়েছে। বছরের ন’মাস সেগুলিকে নালা মনে হলেও বর্ষায় হয়ে ওঠে বড়সড় নদী। মারাত্মক স্রোতও থাকে। ফলে ওইসব ঝোরার জলের স্রোতে বন্যপ্রাণী শাবকদের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। অতীতে একাধিকবার জলদাপাড়ায় হরিণ, হস্তি থেকে গন্ডার শাবক ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেগুলিকে উদ্ধারে কালঘাম ছুটেছে বনকর্মীদের। তাছাড়া বর্ষায় ডুয়ার্সের নদীগুলিতে জলস্তর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই কাঠ পাচারকারীদের দাপটও বেড়ে যায়। জঙ্গলে ঢুকে গাছ কেটে পাচার করতে নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই এবার ডুয়ার্সে পুরোদমে বর্ষা নামার আগেই বোটের ব্যবস্থা করেছে বনদপ্তর।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)