ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: ডুয়ার্সের পর্যটনে লক্ষ্মী আনবে ‘হামসফর’ এক্সপ্রেস। এই আশাতেই বুক বাঁধছেন উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। নদীয়া, মুর্শিদাবাদের উপর দিয়ে চলায় এই ট্রেনে চেপে ওইসব জেলার বাসিন্দারা যেমন সপ্তাহান্তে ডুয়ার্সে বেড়াতে আসার সুযোগ পাবেন, উত্তরের মানুষের কাছেও মায়াপুর, নবদ্বীপ কিংবা হাজারদুয়ারি ভ্রমণ অনেকটাই সহজ হয়ে গেল। ফলে নয়া ট্রেনের সুবাদে পাহাড়-ডুয়ার্সের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের পর্যটন শিল্পও অনেকটা চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন ট্যুর অপারেটর থেকে হোটেল, রিসর্ট মালিকরা। যদিও সপ্তাহে একদিনের বদলে রোজ ট্রেনটি চালানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা। এনিয়ে ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ির পর্যটন ব্যবসায়ীরা রেলকর্তাদের কাছে আর্জি রেখেছেন। এই মুহূর্তে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন হামসফর এক্সপ্রেস চালানোর দাবিতে রেলকে চিঠি দিচ্ছে লাটাগুড়ি হোটেল অ্যান্ড রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম বলেন, কোনও ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে যাত্রীদের চাহিদার দিকটি দেখা হয়। জলপাইগুড়ি রোড-শিয়ালদহ হামসফর এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও যদি চাহিদা থাকে, তবে পরবর্তীতে ট্রেনটি প্রতিদিন চালানোর বিষয়টি নিশ্চয়ই ভেবে দেখবে রেল। সম্প্রতি রাজ্যের উদ্যোগে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, রায়গঞ্জ ও মালদহ থেকে দীঘার এসি ভলভো বাস চালু হয়েছে। এতে সড়কপথে সৈকতনগরীর সঙ্গে মসৃণ হয়েছে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ। এনবিএসটিসি’র ওই বাসে চেপে উত্তরের জেলাগুলি থেকে যেমন বাসিন্দারা দীঘায় জগন্নাথ মন্দির দর্শনে যাচ্ছেন, দীঘা তথা পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষও এক বাসে চেপেই বেড়াতে আসতে পারছেন পাহাড়-ডুয়ার্সে, যা পর্যটনে কিছুটা হলেও গতি এনেছে। এবার হামসফর এক্সপ্রেস তা আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন উত্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
লাটাগুড়ি হোটেল অ্যান্ড রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, এখন উইক এন্ড ট্যুর দারুণ জনপ্রিয়। হামসফর এক্সপ্রেস শুক্রবার রাতে শিয়ালদহ থেকে ছাড়ছে। পরদিন দুপুরের আগেই পৌঁছে যাচ্ছে জলপাইগুড়ি। আর জলপাইগুড়ি থেকে লাটাগুড়ি গাড়িতে ৪০ মিনিটের পথ। ফলে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের পর্যটকরা ওই ট্রেনে চেপে সহজেই ডুয়ার্সে বেড়াতে আসতে পারবেন। দু’টো দিন ডুয়ার্সের জঙ্গলে কাটিয়ে আবার যাতে ওই ট্রেনেই তাঁরা ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য হামসফর এক্সপ্রেস সপ্তাহে অন্তত তিনদিন চালানোর দাবিতে রেলকে চিঠি দিচ্ছি আমরা।
শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে রানাঘাট, কৃষ্ণনগর সিটি, বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের উপর দিয়ে মালদহ হয়ে উত্তরবঙ্গে আসছে হামসফর এক্সপ্রেস। এতে নদীয়া, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের উত্তরবঙ্গে বেড়াতে আসার প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করেন জলপাইগুড়ি ট্যুর অপারেটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি অলোক চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, এতদিন উত্তরবঙ্গে বেড়াতে আসতে গেলে নদীয়া, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের ট্রেন ধরতে দূরে যেতে হতো। এখন তাঁরা ঘরের কাছের স্টেশন থেকেই ট্রেন পেয়ে যাবেন। এতে ডুয়ার্সে বেড়াতে আসার ঝোঁক বাড়বে তাঁদের। একইসঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে যাঁরা নবদ্বীপ, মায়াপুর কিংবা হাজারদুয়ারি যেতে চাইতেন, তাঁদের জন্য সরাসরি কোনও ট্রেন ছিল না বলে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করতেন। হামসফর এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় এবার তাঁরাও দক্ষিণবঙ্গে বেড়াতে যেতে উৎসাহিত হবেন। নিজস্ব চিত্র