রাজা দাস, বালুরঘাট: মূক ও বধির হওয়াই যেন ‘অপরাধ’। নিজের মেয়েকেই মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল মায়ের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাটুল গ্রামে চরম উত্তেজনা। ঘটনার পরেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত মহিলা।
পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন মৃত আরফিনের বাবা আব্দুল আজিজ। বাড়িতে স্ত্রী রিম্পা-সহ বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ নয় বছরের মেয়ে আরফিন এবং তিন বছরের নাবালক সন্তানকে নিয়ে তার বাস। পাশেই থাকেন আব্দুলের পরিবারের অন্য সদস্যরা। রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ কাজে বেরিয়ে যান আব্দুল। দুপুরে তাঁকে পরিবারের অন্য সদস্যরা ফোন করে জানান, তাঁর মেয়ে ঘরের মধ্যে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর ছেলেকে রেখে চলে গিয়েছে। দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন আব্দুল। এলাকায় ততক্ষণে জড়ো হয়ে যান প্রায় সকলেই। অভিযোগ, রিম্পা বিবি তাঁর মূক ও বধির মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় গঙ্গারামপুর থানার আইসি-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। দেহ উদ্ধার করে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গ্রামবাসী লুৎফর আলি ও লুথপা বিবি বলেন, “মেয়েটি কানে শুনতে বা কথা বলতে পারত না। তার মা রিম্পা বিবির মূক ও বধির বাচ্চা ভালো লাগে না বলে প্রতিদিন বলত। এই বাচ্চার সঙ্গে থাকবে না বলে বছরখানেক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছিল। পরে আবার চলে আসে। শুধুমাত্র বাচ্চাদু’টোর কথা ভেবে গ্রামের সকলেই রিম্পাকে ক্ষমা করে দেয়। মূক ও বধির হওয়ার অপরাধেই মেয়েটিকে তার মা মেরে ফেলেছে।” মৃতার পিসি ইয়ানুর খাতুন বলেন, “সকালে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে ভাইজি ইশারা করে জানায় ভালো নেই। আমি ডেকে আম, মুড়ি খেতেও দিয়েছিলাম। বেলা ১০ টা নাগাদ গঙ্গারামপুরে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। বাড়িতে রিম্পা ও বাচ্চা দুটো ছাড়া কেউ ছিল না সেই সময়। বেলা ১২ টা নাগাদ ফিরে আসি। আসামাত্র ছেলেকে আমাদের কাছে দিয়ে দেয় রিম্পা। মেয়ে ঘরে ঘুমিয়ে আছে বলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। কিছু পরে ঘরে ঢুকে আরফিনকে ডাকতে যাই। তখনই তাকে মৃত অবস্থায় দেখি। মনে হয় বালিশ চাপা দিয়ে মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে রিম্পা।” অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব সকলে। এদিকে থানাতে আসার পরেই ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গঙ্গারামপুর থানার আইসি শান্তনু মিত্র জানান, দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় ধৃত মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত এই ঘটনার কিনারা করবে পুলিশ।