বিধান সরকার: কাজের প্রলোভন দেখিয়ে রাজস্থানের জয়পুরে নিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় এক স্বর্ণকার। সেখান থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল সিঙ্গুরের বলরামবাটির সমর মালিক। বহু খুঁজেও কোনও লাভ হয়নি। আশাই ছেড়ে দিয়েছিল বাড়ির লোকজন। কিন্তু ২৫ বছর পর হঠাৎ রবিবার ঘরে ফিরল সে। খুশির হাওয়া পরিবারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র ১২ বছর বয়সে সমর ও গ্রামের আরো একজন নাবালক নবকুমার মালিককে কাজের টোপ দিয়ে বাড়ি থেকে জয়পুর নিয়ে যায় বলরামবাটি এলাকার এক স্বর্ণকার। প্রথম ২ বছর যোগাযোগ ছিল পরিবারের সাথে। পরে হঠাৎই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অথচ ওই স্বর্ণকার জানিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে ভালো আছে, কাজ করছে তারা। নবকুমার সেখান থেকে পালিয়ে কোনভাবে গ্রামে ফিরে এলেও তারপর থেকে আর পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয়নি সমরের। এতদিন খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি বাড়ির লোকজন। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার। হঠাৎ করে বাড়ি ফিরল সেই ছেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হলেও খুশির হাওয়া এলাকায়।
ফিরে আসা এখন আর নাবালক নেই। সে যুবক হয়েছে। বাংলাও ভুলে গিয়েছে। হিন্দিতেই কথা বলে এখন। সমর জানিয়েছে, জয়পুরে যেখানে কাজ করছিল সেখানে তাকে প্রচন্ড মারধর করা হত । সেখান থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে এক হোটেলে কাজে লাগে। দিনরাত হোটেলে পরিশ্রম করলেও খাবার ছাড়া জুটত না কোন কিছুই। টাকা-পয়সাও দেয়নি দোকানের মালিক। পাশাপাশি চলত নানারকম মানসিক অত্যাচার। অবশেষে অন্য জায়গা থেকে এক হাজার টাকা জোগাড় করে জয়পুর থেকে হাওড়া টিকিট কেটে উঠে পড়ে ট্রেনে। হাওড়া স্টেশনে নেমে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে চলে আসেন বলরামবাটি। হাঁটতে হাঁটতে উপস্থিত হয়ে বাড়ির সামনে। কথাবার্তার মাধ্যমে বেরিয়ে আসে যুবকের পরিচয়। যদিও বাংলা ভাষা সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেছে সমর। হিন্দিই এখন তার কাছে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। তবে আর ভিন রাজ্যে ফিরে যেতে চায় না সে। এখানেই কোনএকটা কাজ জোগাড় করে বাকি জীবন টা কাটিয়ে দিতে চায় সমর।
সমরের বাবা সুধীর মালিক চোখে কিছু কম দেখেন।তিনি বলেন ও আমার ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল আজ ফিরে এসেছে।আর ওকে বাইরে যেতে দেব না।