রবীন্দ্র সরোবরে সাঁতার কাটতে নেমে তলিয়ে গেল এক কিশোর। রবিবার সকালে লেক থেকেই তার দেহ উদ্ধার করেছে রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম শিবম সাউ। তার বয়স ১৭ বছর। গড়িয়াহাট এলাকার বালিগঞ্জ প্লেসের বাসিন্দা ছিল সে। ঘটনায় আরও দু’জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, লেকের জলে থাকা গাছগাছালিতে শিবমের পা আটকে গিয়েছিল। সেই কারণেই কিশোর জল থেকে উঠে আসতে পারেনি। পুলিশ অবশ্য সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার সকাল ৭টা নাগাদ তিন বন্ধু শিবম, অভিষেক ও নিখিল সাঁতার কাটতে নামে রবীন্দ্র সরোবর লেকের ১ নম্বর গেটের কাছে থাকা কেএমডিএ-র পাবলিক সুইমিং পুলে। ২০-২৫ মিনিট পরে লেক থেকে উদ্ধার করা দু’জনকে। তারা নিরাপত্তা রক্ষীকে জানায়, একজন তলিয়ে গিয়েছে। এর পরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে লেকের জল থেকে উদ্ধার হয় শিবমের অচৈতন্য দেহ। কিশোরকে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী এমআর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লেকের নির্দিষ্ট কিছুটা অংশে বেশ খানিকটা জায়গা রেলিং দিয়ে ঘেরা রয়েছে। যাঁরা সেভাবে সাঁতার কাটতে পারেন না, তাঁরা মূলত এই জায়গায় নামেন। আর বাকিরা রেলিংয়ের বাইরে নির্দিষ্ট ২০ ফুটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রবিবার শিবম, অভিষেক ও নিখিল রেলিং পেরিয়ে ২০ ফুট এলাকার মধ্যেই ছিলেন। কিন্তু লেকের নীচে জমা গাছপালায় পা আটকে ডুবে যায় শিবম। প্রায় ৪৫ মিনিট পর ৭টা ৪৫ নাগাদ তাঁকে জল থেকে উদ্ধার করা হয়।
রবীন্দ্র সরোবরে অনেকেই প্রতিদিন সকালে সাঁতার কাটতে যান। নিয়মিত হাঁটতেও যান অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন লেকের জল পরিষ্কার করা হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় হয় না বললেই চলে। জলের মধ্যে আগাছায় ছেয়ে গিয়েছে, যা উপর থেকে দেখা যায় না। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘জল এত নোংরা যে রেলিংয়ের ভিতরের অংশে কেউ সাঁতার কাটতে চায় না। আমরা যারা নিয়মিত আসি, জানি কোনদিকে আগাছা আছে, কোনদিকে বিপদ। কিন্তু বাইরের কেউ বুঝবে কী করে?’
এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘যাঁরা লেকে নামেন, সকলে সাঁতার জানেন কি না, তা নিরাপত্তা রক্ষীর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। অনেকেই মৌখিক ভাবে নিরাপত্তা রক্ষীকে জানিয়ে লেকে নেমে যান।’ কেন কর্তৃপক্ষ কোনও দায়িত্ব নেবে না, কড়া নজরদারি থাকবে না, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
এই ঘটনায় ঘটনায় সরোবরের নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সূত্রের খবর, আগে এখানে লাইভ সেভার প্রশিক্ষক থাকত। ৮-৯ বছর হতে চলল, সেটাও নেই। রবীন্দ্র সরোবরের নিরাপত্তা রক্ষী বলেন, ‘আমি ওদের তিনজনকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম সাঁতার জানে কিনা? বলল, হ্যাঁ, সাঁতার জানি। তারপর ঢুকে যায় ভিতরে। তিনজনেই জলে নামে। মিনিট ১৫ এসে দু’জন বলছে, ডুবে গিয়েছে আর একজন। তারপরই আমি পুলিশকে খবর দিই।’