• চাপ কমাতে ত্রিবেণী শ্মশানঘাটে বসছে নতুন চুল্লি
    এই সময় | ১৫ জুন ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী, বাঁশবেড়িয়া

    ত্রিবেণী শ্মশানঘাটে শব দাহের চাপ কমাতে আরও একটি নতুন (তৃতীয়) বৈদ্যুতিক চুল্লি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিল রাজ্যের পুর ও নগরন্নোয়ন দপ্তর। চলতি মাসের ১১ তারিখে রাজ্যের পুর ও নগরন্নোয়ন দপ্তরের তরফে বাঁশবেড়িয়া পুরসভাকে চিঠি দিয়ে ত্রিবেণীতে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির কথা জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন চুল্লি তৈরির জন্য মোট ২ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

    ত্রিবেণী শ্মশানঘাটে ইতিমধ্যেই দু’টো বৈদ্যুতিক দাহচুল্লি রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন গড়পড়তা ৩৪টির বেশি মৃতদেহ শ্মশান ঘাটে আসায়, অনেকেই সময়ের অভাবে অন্যত্র দেহ দাহ করতে চলে যান।

    সেই সমস্যা সমাধানের জন্য বাঁশবেড়িয়ার পুরপ্রধান আদিত্য নিয়োগী বেশ কয়েক বছর ধরেই পুর ও নগরন্নোয়ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পুর ও নগরন্নোয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ত্রিবেণী শশ্মানঘাটে তৃতীয় বৈদ্যুতিক চুল্লির দাবি নিয়ে চিঠি দেন জেলা পরিষদের সদস্য তথা গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক মানস মজুমদার।

    চলতি বছরে পুরদপ্তর ত্রিবেণী শ্মশানঘাটে নতুন করে আরও একটি শবদেহ দাহের জন্য চুল্লির অনুমোদন দিতেই খুশির হাওয়া বইছে বাঁশবেড়িয়া ও ত্রিবেণী জুড়ে।

    বাঁশবেড়িয়া পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত ত্রিবেণী। ব্যান্ডেল রেল স্টেশন থেকে ত্রিবেণীর দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। চুঁচুড়া-কালনা ৮ নম্বর বাস রুটের মাধ্যমে ত্রিবেণীর সঙ্গে চুঁচুড়ার যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। এক সময়ে ত্রিবেণী ছিল একটি বিখ্যাত বন্দর।

    ভারতবর্ষের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হিসেবেও ত্রিবেণীর ঐতিহ্য রয়েছে। এই স্থানে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদী একসঙ্গে মিলেছে। তাই এই স্থানের নাম ত্রিবেণী। এখানকার মুকুন্দদেবের গঙ্গার ঘাটের উত্তর দিকে মহাশ্মশানটি অবস্থিত। এই শ্মশানক্ষেত্রটি হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র স্থান।

    মানুষের ধারণা, এই মহাশ্মশানে দাহ করা হলে মানুষ মৃত্যুর পরে মোক্ষলাভ করে। দেশ–বিদেশের মানুষ এখনও আত্মীয়–স্বজনের মৃত্যুর পরে ত্রিবেণীর মহাশ্মশানে দাহ করতে নিয়ে আসেন। প্রতি দিন শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করার চাপ থাকে।

    সেই কারণেই, দাহ কাজে গতি আনতে তৃতীয় চুল্লি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগী হয় বাঁশবেড়িয়া পুরসভা। এ বিষয়ে বাঁশবেড়িয়ার পুরপ্রধান আদিত্য নিয়োগী বলেন, ‘ত্রিবেণী শ্মশানঘাট নিয়ে মানুষের মনে একটা ভাবাবেগ আছে। আমি পুরপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই শ্মশান ঘাটে আরও একটি নতুন চুল্লির জন্য আবেদন-নিবেদন করি।

    বেশ কয়েকবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা এসে পরিদর্শন করেন। বিদ্যুৎ দপ্তর, পরিবেশ, দমকল— সব বিভাগ ছাড়পত্র দেওয়ার পরেই শ্মশান ঘাটে নতুন চুল্লির প্রস্তাব অনুমোদন করে রাজ্যের নগরন্নোয়ন দপ্তর।’

    জেলা পরিষদের সদস্য মানস মজুমদার বলেন, ‘পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ত্রিবেণী শ্মশানঘাটের নতুন চুল্লির বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত অনুমোদন করেছেন। সরকারের এই উদ্যোগে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।’

    স্থানীয় সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘ত্রিবেণী শ্মশানঘাটে শব দাহ করার সংখ্যা বেড়ে চলায়, আমরা পুরমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। সরকার অনুমোদন করেছে। নতুন চুল্লি তৈরি হলেই, দূর-দূরান্ত থেকে মৃতের আত্মীয়রা এসে শবদেহ দাহ করার সুযোগ পাবেন। তাঁদের আর ফিরে যেতে হবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)