নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, সিডনি হারবার দেখতে গোটা দুনিয়ার পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমান। এসব জায়গায় পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কারণ হল অভিনব আলোকসজ্জা। এবার ৮২ বছরের হাওড়া ব্রিজকেও (রবীন্দ্র সেতু) একইভাবে আকর্ষণীয় আলোকমালায় সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট (এসএমপি) কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক পরিকল্পনার পাশাপাশি এই কাজের জন্য অর্থ সংস্থানের প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে বলে খবর। এসএমপি’র ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহী জানিয়েছেন, কয়েক মাসের মধ্যে টেন্ডার ডাকা যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। আগামী বাংলা নববর্ষের আগেই রবীন্দ্র সেতুর নতুন আলোকসজ্জা চালু করতে চাইছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এমনিতেই হাওড়া ব্রিজ কলকাতা শহরের অন্যতম ‘আইকন’ হিসেবে দেশ ও বিদেশের মানুষের কাছে পরিচিত। আলো দিয়ে সাজানোর প্রকল্পটি শেষ হলে এর আকর্ষণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে এবং কলকাতার জন্য নতুন গর্বের বিষয় হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। দেশে বা বিদেশে ব্রিজ বা কোনও নির্মাণস্থল আলোকায়নের কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ সংস্থাকে দিয়েই এই কাজ করাতে চাইছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আলোর পাশাপাশি থাকবে ‘সাউন্ড এফেক্ট’-এর ব্যবস্থাও। এর জন্য একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। মিলেনিয়াম পার্ক থেকে হাওড়া ব্রিজের আলোকসজ্জা দেখতে পাওয়ার পাশাপাশি সাউন্ড এফেক্টও যাতে পাওয়া যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা আছে। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য কত কোটি টাকা খরচ হবে, তা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনই মুখ খুলতে চাইছে না। বন্দরের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, একটি নবরত্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। তারা তাদের সিএসআর তহবিল থেকে খরচের বড় অংশ দেবে।
প্রসঙ্গত, হাওড়া ব্রিজে প্রথম আলো লাগানোর ব্যবস্থা করা হয় ২০০৬ সাল নাগাদ। পরবর্তীকালে এলইডি আলো লাগিয়ে আলোকসজ্জা আরও উন্নত ও আকর্ষণীয় করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কয়েক ঘন্টার জন্য হাওড়া ব্রিজে সেই আলো জ্বালানো হয়। বিশেষ বিশেষ দিনে কিছু অভিনবত্বও যুক্ত হয়। তাহলে নতুন করে আর কী হবে? এখন মূলত ব্রিজের ‘স্কেলিটন’ ও কিছুটা ‘প্রোফাইল’ অংশে আলো লাগানো আছে। এবার ‘ভলুমেট্রিক’ আলো লাগানো হবে। সহজভাবে বলতে গেলে, আলোর খেলা চলবে গোটা ব্রিজে। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডায়নামিক অর্কিটেকচারাল ইলুমিনেশন অব রবীন্দ্র সেতু’। মোট পাঁচ ধরনের উন্নত আলো ব্যবহার করা হবে। স্বাধীনতা দিবস, পুজো সহ ৬০টি গুরুত্বপূর্ণ দিনে আলোর খেলা দেখা যাবে হাওড়া ব্রিজজুড়ে। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ৫-১০ মিনিটের বিশেষ শো থাকবে ওই দিনগুলিতে। ডেপুটি চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, দর্শনার্থীরা যাতে আলোয় সেজে ওঠা হাওড়া ব্রিজকে নিয়ে ‘সেলফি’ তুলতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও থাকছে।