নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত প্রায় ১টা। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি পানশালায় তখনও মদ্যপান করে চলেছে কয়েকজন। নেশা যত চড়ছে, ততই বাড়ছে আরও মদ্যপানের ইচ্ছে! আবারও মদ ‘সার্ভ’ করতে বলছে তারা। এক সময় পানশালার কর্মীরা সাফ জানিয়ে দেন, ‘অনেক রাত হয়েছে। আর মদ সার্ভ করা যাবে না।’ এরপরই বচসার সূত্রপাত। এই উত্তেজনার মধ্যেই পানশালার একটি কাচের বাটি কোনওভাবে পড়ে ভেঙে যায়। তারপর পানশালার কর্মী ও তিন যুবকের ঝামেলা তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু তার পরিণতিতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানে গুলি চলবে, কে জানত! অভিযোগ, শুক্রবার মধ্যরাতে এমনটাই ঘটেছে দমদমের মাঠকল এলাকার ওই পানশালায়। প্রায় তিন রাউন্ড গুলি চলে। মদ্যপ যুবকের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন পানশালার ম্যানেজার পিন্টু রুদ্র। তাঁর বুকে গুলি লাগে। প্রথমে তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। শনিবার তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে খবর, দমদমের গড়ুই মাঠকলের বাসিন্দা বিট্টু দাস তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে শুক্রবার রাতে ওই পানশালায় মদ্যপান করতে গিয়েছিল। অনেক রাত পর্যন্ত সেখানে মদ্যপান চালিয়ে যায় তারা। এক সময় পানশালার কর্মীরা মদ ‘সার্ভ’ করতে গররাজি হওয়ায় ঝামেলা বাধে। সেই সময় ধাক্কাধাক্কিতে একটি কাচের বাটি পড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পানশালার বাউন্সাররা বিট্টু সহ তিনজনকে রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। তখনকার মতো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় তারা। যাওয়ার সময় বিট্টু হুমকি দিয়ে যায়, ‘সবাইকে দেখে নেওয়া হবে।’ কিছুক্ষণ পরই সেখানে ফিরে এসে ফের পানশালায় ঢোকার চেষ্টা করে বিট্টুরা। বাধা দেওয়া হলে আবারও গোলমাল শুরু হয়ে যায়। হইচই শুনে পানশালার ম্যানেজার বেরিয়ে আসেন। সেই সময় আচমকাই বিট্টু রিভলভার থেকে গুলি চালায় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার পর বিট্টুরা চম্পট দেয়। ঘটনাস্থলে আসে দমদম থানার পুলিস। প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পারে, একটি নাইন এমএম পিস্তল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। পুলিস বিট্টুর এক সঙ্গী গোপাল বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও বিট্টুর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তার খোঁজ চালানো হচ্ছে।
এদিকে, এই ঘটনায় ওই পানশালা তো বটেই, মাঠকল এলাকায়ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের পানশালাগুলিতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিস। বাড়ানো হয়েছে টহলদারিও। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের একটি পানশালার মালিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় রীতিমতো তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল।