• ভাতা ৩৫০০ টাকা, অস্থায়ী কর্মীর ব্যাঙ্কে সাড়ে ৩ কোটি, পাসপোর্ট কাণ্ডে তাজ্জব তদন্তকারীরা
    বর্তমান | ১৫ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে প্রত্যন্ত গোসাবা দ্বীপের পাঠানখালি পঞ্চায়েত। সেই পঞ্চায়েতের চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী গৌতম সর্দার। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। প্রতি মাসে ভাতা বাবদ পান ৩৫০০ টাকা। এহেন এক অস্থায়ী কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হালহকিকত জানতে গিয়ে ‘চক্ষু চড়কগাছ’ কলকাতা পুলিসের সিকিওরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (এসসিও) আধিকারিকদের। সাড়ে তিন হাজারি অস্থায়ী কর্মীর অ্যাকাউন্টে রয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা! শুধুমাত্র ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢুকেছে গৌতমের অ্যাকাউন্টে। 

    ভুয়ো নথিপত্র দিয়ে বাংলাদেশি সহ অন্যান্যদের পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে দেওয়ার যে চক্র সক্রিয় হয়েছে রাজ্যজু঩ড়ে, তারই অন্যতম পান্ডা গৌতম। গত ৩১ মে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে এখন এসসিও হেফাজতেই রয়েছেন এই যুবক। প্রত্যন্ত পাঠানখালির পঞ্চায়েতের ওই অস্থায়ী কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, কমপক্ষে ৩৫০০ ভুয়ো জন্ম শংসাপত্র তৈরি করে সেগুলি বিক্রি করেছেন। দর ছিল ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। এই শংসাপত্রকে ভিত্তি করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সহ অন্যরা আধার ও প্যান কার্ড এবং পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে নিয়েছে। 

    এসসিও সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ২৪-২৫ আর্থিক বছরই নয়, ২০২২ সাল থেকে গৌতমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সবমিলিয়ে জমা পড়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এই পর্বে এমন বেশ কিছু মাস রয়েছে, যেখানে শুধু মোটা অঙ্কের নগদই জমা পড়েছে। এসসিও সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনিভাবে রোজগারের অর্থে গৌতম কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় ফ্ল্যাট ও জমি কিনেছে বলে খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেটিরও খোঁজখবর চলছে। 

    পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিসের এসসিও জানতে পারে, অনুপ্রবেশকারী ১৩৪ জন বাংলাদেশি ভুয়ো নথি দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট বানিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি বেশকিছু স্থানীয় মানুষ, যাদের জন্ম শংসাপত্র নেই, তারাও ভুয়ো নথি জোগাড় করে পাসপোর্ট তৈরির আবেদন করছে। ভবানীপুর ও একবালপুর থানায় এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলাও শুরু হয়। এসসিও সূত্রে জানা গিয়েছে, একবালপুরে বাদল সাহানি নামে এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভেরিফিকেশনের জন্য যে জন্ম শংসাপত্রটি তিনি জমা দিয়েছিলেন, সেটি ভুয়ো। তা ইস্যু হয়েছে পাঠানখালি পঞ্চায়েত থেকে। এরপর উত্তরপ্রদেশের এহসান খান নামে এক যুবকের সন্ধান মেলে। গার্ডেনরিচ থেকে পাসপোর্টের আবেদন করলেও, তার জন্ম শংসাপত্র পাঠানখালির। এরপরই তদন্তে সামনে আসে গৌতম সর্দারের নাম।
  • Link to this news (বর্তমান)