ত্রাতা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ, প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় নতুন জীবন পেলেন যুবক চিকিৎসকদের জাদুবলে...
আজকাল | ১৫ জুন ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বালুরঘাটের বাসিন্দা আশিসে পাহান, বয়স ৩২ বছর। সাত দিন আগে বালুরঘাটে এক বৃষ্টির রাতে বাইকে করে ভাইয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় বাড়ির দোরগোরায় এসে বাইক থেকে নামার সময় পড়ে গিয়ে ল্যাম্পপোস্টে সজোরে ধাক্কা লেগে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে আশীষের খুলির একাংশ টুকরো টুকরো হয়ে ঘিলুর কিছু অংশ বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় বালুরঘাট সদর হাসপাতালে। সেখান চিকিৎসকার হাত তুলে দেন।
একাধিক হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে আশিসের স্থান হয় কলকাতা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এরপর শুরু হয় চিকিৎসা। অস্ত্রোপচারের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুমুখ থেকে জীবন ফিরে পেলেন আশীষ। বর্তমানে তিনি উঠে বসেছেন এবং নিজে হাতে খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরজি কর হাসপাতালের নিউরো বিভাগের চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের ঘটনায় প্রাণ ফিরে পাওয়া বা সুস্থ হয়ে ফিরে আসা মিরাকেল ছাড়া সম্ভব নয়। এই দুর্ঘটনায় আশিসের মাথার খুলির ডানদিকের অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। একই সঙ্গে ডানদিকের চোয়ালের হার এবং চোখের একাংশের হাড় ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা এবং মগজের রস ক্ষরণ হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনায় রোগীকে ফিরিয়ে আনা খুবই দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়ায়। যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে এরপরে আরও কিছু চিকিৎসার বাকি রয়েছে যা ধীরে ধীরে তাঁকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলবে।
আশিসের ভাই তরুণ পাহান জানান, বালুরঘাটে ঘটনা ঘটার পরে সেখানকার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য সোজা আরজি করে নিয়ে আসা হয়। আশিস কৃষিকাজ করেন। ভাইয়ের বিয়ের নিমন্তন্ন করতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথেই ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অস্ত্রোপচারেপ পর এখন তাঁর দাদা সুস্থ আছেন।
আরজিকরের নিউরো বিভাগের চিকিৎসক তথা অধ্যাপক অঙ্কন মণ্ডল এবং তাঁর সহকারী নিউরো বিভাগের পড়ুয়া চিকিৎসক (PDT) কুন্তল বিট্টেল এবং কৌস্তুভ ব্যানার্জি বলেন, "আশিসকে বালুরঘাট থেকে যখন এখানে নিয়ে আসা হয় তখন আমরাই দেখে চমকে উঠেছিলাম তাঁর অবস্থা দেখে। একপ্রকার ভয়ঙ্কর অবস্থায় তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তারপর তাঁকে সিটি স্ক্যান করে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া হলে আমরা তাঁর মাথার খুলির সমস্ত ভেঙে যাওয়া হাড়ের কিছু অংশ জোড়া লাগিয়ে ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করি। একপ্রকার ম্যারাথন অস্ত্রোপচার বলা যায় তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। আশিস ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছেন। এখন আশীষ বাবু নিজে হাতে খাবার খাচ্ছেন, উঠে বসছেন, কথা বলছেন। আশা করা যায় আর কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে আরও কিছু চিকিৎসা চলবে যা পূর্বের অবস্থায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসার জন্য। আমরাও খুব আনন্দিত যে তাঁকে আমরা সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি এবং তাঁর সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে পেরেছি তাঁর পরিবারের কাছে।"