পাখি দেখে ফিরে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টারও, এরোড্রোম ঝুঁকিমুক্ত থাকে কি?
আনন্দবাজার | ১৪ জুন ২০২৫
বছর দুয়েক আগে কলকাতার আকাশেই পাখির ঝাঁকের মুখোমুখি পড়েছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার। তবে, মুখ্যমন্ত্রী সে সময়ে হেলিকপ্টারে ছিলেন না। বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে হাওড়ার ডুমুরজলায় মুখ্যমন্ত্রীকে তুলতে যাওয়ার কথা ছিল সেটির। কিন্তু আকাশে পাখির ঝাঁক মুখোমুখি চলে আসায় বেহালাতেই নেমে পড়ে হেলিকপ্টারটি। কিছু ক্ষণ ধরে বাজিপটকা ফাটিয়ে পাখি তাড়ানোর পরে ফের হেলিকপ্টার বেহালা থেকে হাওড়ার দিকে উড়ে যায়।
গুজরাতের আমদাবাদে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে, বিমানের ইঞ্জিনে পাখির ধাক্কা সম্ভাব্য কারণগুলির একটি বলে অনুমান করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতার আকাশে বিমানের ইঞ্জিনের সঙ্গে পাখির ধাক্কা লাগার আশঙ্কা কতটা? এ বার তাই নতুন করে কলকাতা তথা রাজ্যের বিভিন্ন ছোট বিমানবন্দর (এরোড্রোম) এলাকা পাখিমুক্ত রাখার কাজ কতটা ঠিকঠাক ভাবে চলছে, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে পরিবহণ দফতর।
দফতর সূত্রের খবর, বেহালা, বালুরঘাট, মালদহ, অন্ডাল ও কোচবিহারে এরোড্রোম রয়েছে। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ৩৬টি হেলিপ্যাড। দু’-একটি এরোড্রোম ছাড়া বাকি সব ক’টিরই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য পরিবহণ দফতরের। এমনকি, হেলিপ্যাডগুলিও তারাই দেখাশোনা করে। মূলত মুখ্যমন্ত্রীই হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। সেটি রাখা থাকে বেহালা এরোড্রোমে।
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী কিংবা তাঁর মতো কোনও বিশিষ্ট নাগরিক যখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন, তখন অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, অনেকজায়গাতেই এরোড্রোমের আশপাশে দেখা যায়, বড় বড় গাছ ও জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে। সব সময়ে সেগুলি কাটাও হয় না। আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার-যাত্রা ঠিক হলে তখন চটজলদি সব কাজকর্ম শুরু হয়। সেই সময়ে বাজিপটকা ফাটিয়ে পাখি তাড়ানোর কাজও হয়ে থাকে। কিন্তু সব সময়ে যে তাতে পাখি উড়ে অন্যত্র চলে যায়, তা-ও নয়।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন চালু হওয়ার পরেই যে পরিমাণ শব্দ ও হাওয়া তৈরি হয়, তাতে পাখিরা ভয় পেয়ে উড়তে শুরু করে দেয়। হেলিকপ্টারে পাখির ধাক্কার ঝুঁকি খুব বেশি। বিশেষত, হেলিকপ্টারের পিছনের পাখা দ্রুত সব কিছু টেনে নিতে পারে। তাই আকাশে ওড়ার আগে হেলিকপ্টারের পথে কোনও ভাবেই যাতে পাখি আসতে না পারে, সে দিকে নজর রাখা জরুরি। পরিবহণ দফতরের এক প্রাক্তন আধিকারিকের কথায়, ‘‘নিয়ম হল, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকে সংশ্লিষ্ট হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টারটি দাঁড়িয়ে থাকবে। দু’বছর আগে বেহালার ওই ঘটনার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ডুমুরজলার উদ্দেশে ওড়ার পরেই পাখিদের সামনে পড়ে হেলিকপ্টারটি। তার পরে ফের সেটি নেমে আসে। পাখি তাড়ানোর পরে আবার রওনা হতে খানিকটা দেরি হয়ে যায়।’’
বেহালা এরোড্রোমের ভিতরে বর্তমানে অনেকটা অংশ জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও পরিবহণ দফতর সূত্রের দাবি, বৃষ্টিতে কোনও কোনও অংশে জঙ্গল বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে। সাধারণত, এরোড্রোম কিংবা এই ধরনের ছোট বিমানবন্দরের আশপাশে উঁচু নির্মাণ করতে দেওয়া হয় না, গাছ ও জঙ্গলও বাড়তে দেওয়া হয় না।
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘একটা ঘটনা সদ্য ঘটেছে। তবে, তা পাখির কারণেই কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, যে সব ছোট বিমানবন্দর আমাদের দেখাশোনা করতে হয়, সেখানে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই করা হয়। কোথায় কোথায় এরোড্রোমের আশপাশে জঙ্গল কিংবা বড় গাছের সমস্যা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’