এই সময়, জলপাইগুড়ি: ফার্মাসি কলেজের ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার গরমিলের ঘটনায় হতে পারে সিবিআই তদন্ত। এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তার আগে দুর্নীতি দমন শাখাকে তদন্ত করে একমাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
এই রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে লিখিত নির্দেশে উল্লেখ করেছেন বিচারপতিরা। জলপাইগুড়ি ফার্মাসি কলেজের অধ্যক্ষ উত্তম শর্মা বলেছেন, তাঁরা তদন্তকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
ফার্মাসি কলেজে প্রায় দু’দশকে কোনও অডিট হয়নি। ১৯৯৮ সালের পয়লা নভেম্বর থেকে ২০১৭-র ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এমনই অভিযোগ তুলে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কলেজের অতিথি শিক্ষক তথা প্রাক্তন ছাত্র সীমান্ত ভট্টাচার্য।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলাশাসক স্থানীয় ভাবে তদন্ত করান। এর পরে সীমান্ত আরও একটি অভিযোগ করেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কাছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই এজি বেঙ্গল পূর্ণাঙ্গ অডিট করে।
১৯ পাতার অডিট রিপোর্ট ডেপুটি অ্যাকাউন্ট জেনারেলের পক্ষ থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকার্তাকে পাঠানো হয়।
এই রিপোর্টে কলেজে অনুসন্ধানে আসা আধিকারিকরা তহবিল নয়ছয়ের সন্দেহ প্রকাশ করেন। এর অঙ্ক ১ কোটি ৮০ লক্ষ ২ হাজার ৬১৬ টাকা। শুধু তাই নয়, রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া টাকাও তহবিলে জমা পড়েনি।
২০১৩-১৪ সাল থেকে ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত আদায় করা টাকা ক্যাশ বুকে তোলা হয়নি। একই ভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমানো টাকার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
কলেজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। একটি বেসরকারি এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে সেলফ চেকের মাধ্যমে একাধিক বার টাকা তোলা হয়েছে।
এই অনিয়মের ক্ষেত্রে কলেজের একজন অধ্যাপক এবং দু’জন গ্রুপ ‘ডি’ স্টাফের নাম রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন ১৯৮৯–এর পয়লা নভেম্বর থেকে থেকে ১৯৯৫–এর ৩০ মে পর্যন্ত কোনও ক্যশবুক কলেজ কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেননি।
২০০৮–এর পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪–র ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্যশবুকের কোনও পৃষ্ঠা নম্বর পাওয়া যায়নি বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ‘কশান মানি’ ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে কলেজের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও, তার প্রমাণ দেখাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেন সীমান্ত ভট্টাচার্য। এই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চে সরকারপক্ষের আইনজীবী জানান, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, প্রয়াত সৌরভ সিংহরায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।
বিচারপতিরা জানতে চান, চার্জশিটের কপি কোথায়। ২০২২ সালে এফআইআরের পরে এই মামলায় চার্জশিট না হওয়ায় অসন্তোষ জানায় আদালত। এর পরেই ডিভিশন বেঞ্চ দুর্নীতিদমন শাখার সর্বোচ্চ আধিকারিককে এই ঘটনার তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই তদন্ত রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হলে মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়া হবে বলে লিখিত নির্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিচারপতিরা।