পুলক বেরা, তমলুক
কেউ আইএএস হতে চায়, কেউ চায় ভালো মানুষ হতে। কিন্তু শিক্ষক? নৈব নৈব চ!
শিশুশ্রম বিরোধী দিবসে প্রশাসনিক সচেতনতা শিবিরে পড়ুয়াদের মুখে এমন কথা শুনে কখনও অস্বস্তিত পড়লেন, কখনও চমকে উঠলেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। রাজ্যজুড়ে চলতে থাকা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ছায়া যে শিশুমনেও প্রভাব ফেলেছে, বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে তা স্পষ্ট হয়ে গেল।
তমলুকের নিমতৌড়ি প্রশাসনিক ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল শিশুশ্রম বিরোধী সচেতনতা শিবির। সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়েন্ট লেবার কমিশনার (তমলুক) অনিন্দিতা ভট্টাচার্য, জয়েন্ট লেবার কমিশনার (হলদিয়া) সুদীপ্ত সামন্ত-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘পারিবারিক অনটন বা সামাজিক পরিস্থিতির কারণে অনেক শিশুই পড়াশোনা ছেড়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ে। শিশুশ্রম রুখতে পড়ুয়া, অভিভাবক এবং বিদ্যালয়— তিন পক্ষকেই সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে।’ বক্তৃতার ফাঁকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চান।
অতিরিক্ত জেলাশাসক নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ুয়াদের প্রশ্ন করেন, ‘কে কে পুলিশ বা শিক্ষক হতে চাও?’ উত্তরে নীরব থাকে অডিটোরিয়াম। তবে দুই পড়ুয়া এগিয়ে এসে জানায়, তারা আইএএস অফিসার হতে চায়।
জবাবে আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রশাসনিক কর্তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসকের কথায়, ‘বেশিরভাগ পড়ুয়া ডাক্তার, পুলিশ কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু ওই দুই পড়ুয়ার আইএএস হতে চায় শুনে খুব ভালো লেগেছে।’
তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই পড়ুয়া নিরঞ্জন ফদিকার ও অয়ন ভৌমিক জানায়, বর্তমানে শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে যা চলছে, তা দেখে ওই পেশায় যেতে চায় না তারা। সবচেয়ে মন ছুঁয়ে যায় ব্যাবতারহাট হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভাশিস রায়ের বক্তব্য। সবার সামনে উঠে দাঁড়িয়ে সে বলে, ‘শুধু ভালো রেজাল্ট করে চাকরি নয়, আমি ভালো মানুষ হতে চাই।’