আরপিএফের হাত থেকে বাঁচতে লাইনে ঝাঁপ, পা কাটা গেল যাত্রীর
বর্তমান | ১৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: আরপিএফের ধরপাকড়ের হাত থেকে বাঁচতে আচমকা রেললাইনে ঝাঁপ দিলেন ট্রেনের এক যাত্রী। তাঁকে পাকড়াও করতে পরপর লাইনে ঝাঁপ দেন দুই আরপিএফ জওয়ান। সেই সময় দমদম স্টেশনে ঢুকছিল ডাউন বারাকপুর লোকাল। চালক দ্রুততার সঙ্গে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষলেও বিপদ এড়ানো যায়নি। ট্রেনে কাটা পড়ে ওই যাত্রীর পা। লাইনে শুয়ে পড়ে কোনওরকমে জীবন বাঁচান আরপিএফের এক মহিলা জওয়ান। দ্রুত ট্রেনের ইঞ্জিন পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে ওই মহিলা আরপিএফ জওয়ান এবং জখম যাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুক্রবার সকালে দমদম স্টেশনের এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় যাত্রীদের মধ্যে।
সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে ডাউন রানাঘাট-শিয়ালদহ মেমুর সিটে বসা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। ক্রমশ সেই গোলমাল মাত্রাছাড়া হওয়ার উপক্রম হলে কোনও যাত্রী আরপিএফকে ফোন করেন। বারাকপুর স্টেশনে আরপিএফ ওই কামরায় পৌঁছনোর আগেই ট্রেন ছেড়ে দেয়। ট্রেনটি সকাল ৯টা নাগাদ দমদমের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতেই ট্রেন থেকে নেমে পড়েন চাকদহের বাসিন্দা জগদীশ সরকার। আরপিএফ তাঁকে পাকড়াও করে। তখন জগদীশবাবু জানান, তিনি কোনও ঝামেলায় ছিলেন না। তাঁর সমর্থনে কয়েকজন যাত্রীও এগিয়ে আসেন। এনিয়ে আরপিএফের সঙ্গে কথা কাটাকাটি চলার সময় স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যায় রানাঘাট-শিয়ালদহ মেমু। আরপিএফের জওয়ানরা তখন জগদীশবাবুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সেই সময় তিনি হাত ছাড়িয়ে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইনে ঝাঁপ দেন। তাঁকে ধরতে লাইনে নেমে পড়েন আরপিএফের ওই মহিলা জওয়ান সহ দু’জন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২ নম্বর লাইনের উপর উল্টে পড়েন ওই মহিলা আরপিএফ জওয়ান এবং জগদীশবাবু। সেই সময় ওই লাইনে দ্রুত গতিতে ঢুকছিল ডাউন গ্যালপিং বারাকপুর-শিয়ালদহ লোকাল। চালক দ্রুত ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন। কিন্তু জগদীশবাবুর পায়ের উপর দিয়ে ইঞ্জিনের চাকা চলে যায়। মহিলা জওয়ান লাইনে শুয়ে পড়ায় বরাতজোরে বেঁচে যান। তবে মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছেন তিনি। তড়িঘড়ি ইঞ্জিন পিছিয়ে এনে মহিলা জওয়ান ও জগদীশবাবুকে উদ্ধার করা হয়। দমদম জিআরপি থানা দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জগদীশবাবু আর জি করে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জখম আরপিএফ জওয়ানকে শিয়ালদহের রেলওয়ে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। লাইনে ঝাঁপ দেওয়া অপর এক আরপিএফ জওয়ান বারাকপুর লোকাল ঢোকার সময় ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে চলে যেতে পারায় তাঁর কোনও চোট লাগেনি। প্রায় ২০ মিনিট পর ওই ট্রেন দমদম স্টেশন থেকে রওনা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কয়েক জন যাত্রী যাবতীয় ঘটনার ছবি তুললে সেখানে থাকা আরপিএফ জওয়ানরা সেই ছবি মোবাইল থেকে ডিলিট করতে বাধ্য করেন। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, কয়েকজন নিত্যযাত্রী ডাউন রানাঘাট-শিয়ালদহ মেমুর সিট দখলে রাখতে বিভিন্ন জিনিসপত্র সেখানে রাখছিলেন। তা নিয়েই যাত্রীদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছিল। খবর পেয়ে আরপিএফ এক যাত্রীকে হাতেনাতে ধরে দমদম স্টেশনে নামায়। ওই যাত্রী লাইনে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করাতেই বিপত্তি।