শহরের ৫ জায়গায় র্যাকেট শ্বেতার, পর্নের নায়ক ছেলেই
বর্তমান | ১৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: লেখাপড়া বেশি দূর নয়, পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। পেটের তাগিদে যৌন কারবারের ‘পিম্প’ (দালাল) হিসেবে পথচলা শুরু। এরপর কারবারের আদ্যোপান্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে নিজেই খুলে ফেলে ‘সেক্স র্যাকেট’। ফেঁদে বসে দেহব্যবসা, এসকর্ট সার্ভিস আর পর্ন ভিডিও’র রমরমা কারবার—সোদপুরের যুবতী নির্যাতন কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শ্বেতা খানকে জেরা করে এই তথ্যই পেয়েছেন হাওড়া পুলিস কমিশনারেটের তদন্তকারীরা। বন্দরের যে ‘ডন’-এর বর্তমান গার্লফ্রেন্ড শ্বেতা, তার ‘ভরসা’তেই মেটিয়াবুরুজ, আকড়া-সন্তোষপুর, হরিদেবপুর, বেহালা ও কসবা এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে খুলে ফেলে ‘মধুচক্র’। ডনের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায়, প্রতিবাদে টুঁ শব্দটি করার হিম্মত দেখায়নি কেউই। এই সমস্ত ফ্ল্যাটেই চলত পর্ন ভিডিও’র কারবারও। নিজের ছেলে আরিয়ান খানকে ‘নায়ক’ বানিয়ে তৈরি হতো অশ্লীল শর্ট ফিল্ম। সেই ফিল্ম দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, পৌঁছে যেত ব্যাংককের নীল ছবির কারবারিদের কাছেও। মোটা পারিশ্রমিক মিলত শ্বেতার। অশ্লীল ছবি ও যৌন কারবারের ফাঁদে বাংলাদেশি মেয়েরাও পড়েছিল বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার সোদপুরের যুবতীকে বউমা বলে দাবি করেছিল শ্বেতা। শুক্রবার বয়ান বদল করে ফের বলেছে, বিবাহিতা ওই যুবতীর সঙ্গে তার স্বামীর এখনও ডিভোর্স হয়নি। তাই ছেলে (আরিয়ান) ওকে (সোদপুরের যুবতী) পছন্দ করলেও, আমার কিছুটা আপত্তি ছিল।
জেরায় শ্বেতা পুলিসকে জানিয়েছে, ১৪-১৫ বছর আগে অর্থ রোজগারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় বাঁকড়ার এক মহিলা তার কাছে যৌন কারবারের ‘দালাল’ হওয়ার প্রস্তাব দেয়। দুঃস্থ, অভাবী ঘরের মেয়েদের জোগাড় করে আনতে হবে মধুচক্রের জন্য। রাজি হয়ে যায় শ্বেতা। শুরু হল কমিশনভিত্তিক আয়। মধুচক্র কারবারের হালহকিত জেনে এরপর নিজেই ব্যবসা শুরু করে শ্বেতা। তদন্তকারীরা বলছেন, বছর ১৫ আগে বাঁকড়ায় এক বহুতলে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ‘মধুচক্রে’র কারবার শুরু করে এই ‘মক্ষীরানি’। অল্পদিনের মধ্যেই পসার বাড়ে। কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভাবী মেয়েরা যোগ দেয় শ্বেতার ‘কালা কারবারে’। এরপর কলকাতায় ব্যবসার ‘শাখা’ খোলে সে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, বন্দরের রাজাবাগান এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কলকাতার ‘দপ্তর’ শুরু করে শ্বেতা। এই বাড়িতেই প্রথমবারের মতো পর্ন ভিডিও’র কারবার শুরু হয়। পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বন্দর এলাকার ওই ‘ডন’-এর সঙ্গে। এরপর ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার কয়েকটি প্রান্তে।
তদন্তকারীরা বলছেন, বন্দরের ‘ঘাঁটি’ থেকেই এসকর্ট সার্ভিসের কারবার চালু করে শ্বেতা। হাই প্রোফাইল মেয়েদের নামানো হয় তাতে। মূল্যবান ‘কাস্টমার’দের সঙ্গে শ্বেতা নিজেই যোগাযোগ করত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে। ছবি পাঠানো হতো কাস্টমারকে। এরপর ‘বাছাই’ হওয়া মেয়েটিকে তার অনুরাগী ‘ডন’-এর শাগরেদদের দিয়ে পৌঁছে দিত নির্দিষ্ট জায়গায়।