• অণ্ডালে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও যানজট, পদক্ষেপ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের
    বর্তমান | ১৪ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোড যেন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্কিং জোন। সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে ছা‌‌ইবোঝাই দৈত্যাকার ট্যাঙ্কার। অণ্ডাল মোড়ের গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস রোডে এই অরাজকতার জেরে যানজটে নাকাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ব্যস্ত এই রাস্তায় ঘটছে দুর্ঘটনাও। সম্প্রতি একজনের মৃত্যুর পর পুলিস তৎপর হলেও বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস ওঠার দশা। কারখানার ছাই উড়ে দুর্গাপুরের গোপালমাঠ সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। শুনানি করে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে একগুচ্ছ নির্দেশিকা দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

    ডিসি(ট্রাফিক) ভিজি সতীশ পশুমূর্তি বলেন, অণ্ডালের সার্ভিস রোডের উপর ট্যাঙ্কারগুলি দাঁড়িয়ে থাকায় সমস্যা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যুও হয়েছে। সেখানে গাড়ি দাঁড় করালেই আমরা মামলা রুজু করছি।

    অণ্ডালে রয়েছে ডিভিসির দুর্গাপুর স্টিল থার্মাল পাওয়ার স্টেশন(ডিএসটিপিএস)। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ায় উৎপাদনের সময় বিপুল পরিমাণ ছাই উৎপন্ন হয়। মূলত দু’প্রকারের ছাই উৎপন্ন হয়। ভিজে ‘পন্ড অ্যাশ’ ও শুকনো ‘ফ্লা‌ই অ্যাশ’। ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফ্লাই অ্যাশ নেওয়ার জন্য ডিএসটিপিএস একটি বৃহৎ সিমেন্ট প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। তারাই আবার বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টারের মাধ্যমে সিমেন্ট কারখানায় বাল্কারে ভরে ছাই নিয়ে যায়। এই ছাই পরিবহণের জেরে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় রয়েছেন অণ্ডালের বাসিন্দারা। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ছাইবোঝাই ট্যাঙ্কারগুলির জন্য কোনও পার্কিং জোন করে দেয়নি। তাই কারখানা থেকে বেরিয়ে ট্যাঙ্কারগুলির চালক ও খালাসি সার্ভিস রোডের উপরেই বিশ্রাম নিচ্ছে। এই বিশ্রাম নেওয়ার পিছনেও ‘ধান্দা’ রয়েছে। অণ্ডালে জাতীয় সড়কের সাবওয়েটি অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। একই অবস্থা কাজোড়া সাবওয়ের। তাই পুলিস নির্দেশ দিয়েছে, ট্যাঙ্কারগুলিকে প্রথমে আসানসোল অভিমুখের লেন ধরে টপ লাইন মোড় পর্যন্ত যেতে হবে। সেখানে জাতীয় সড়কে লেন পরিবর্তন করে কলকাতা অভিমুখে আসতে পারবে ট্যাঙ্কারগুলি। জ্বালানি বাঁচাতে বহুক্ষেত্রেই এই রুটে না গিয়ে গাড়িগুলি সার্ভিস রোডেই অপেক্ষা করতে থাকে। অণ্ডাল সার্ভিস রোডের সাবওয়েতে ভিড় না থাকলে নিয়ম ভেঙে সেখান দিয়েই গাড়িগুলি কলকাতা লেনে নিয়ে যায়। এরজেরে যানজটে নাকাল হচ্ছেন অণ্ডালের বাসিন্দারা। অণ্ডালের বিডিও দেবাঞ্জন দত্ত বলেন, জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ট্রাফিকের ওসিকে বলেছি অবৈধ পার্কিং হলেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

    কারখানার ছাই থেকে দূষণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিচার করছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। গোপালমাঠের ভূমিরক্ষা কমিটির তরফে বিষয়টি নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগ করা হয়। শুনানির শেষে তারা জানিয়েছে, কোনওভাবেই ফ্লাই অ্যাশ, ছাই পুকুরে(অ্যাশ পন্ড) ফেলা যাবে না। কীভাবে ফ্লাই অ্যাশ পরিবহণ হচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে। ছাই পুকুরের চারপাশে গ্রিনবেল্ট গড়ে তুলতে হবে। 

    পরিবেশ দূষণ রোধে নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নামে ২০লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক গ্যারেন্টি রাখতে হবে। পরিবেশ বিধি মানা হচ্ছে কি না, তার নিশ্চয়তার জন্য‌ই এটি রাখা হবে। ডিভিসি সূত্রে খবর, ট্যাঙ্কারগুলি যাতে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে না থাকে সেই বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকেও সচেতন করা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)