• লোন করিয়ে দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা, পুলিশের জালে কোন্নগরের যুবক!
    এই সময় | ১৩ জুন ২০২৫
  • পার্সোনাল লোন করিয়ে দেওয়ার নাম করে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ রাজ্যে। জানা গিয়েছে, বহু মানুষের থেকে তাদের নথি সংগ্রহ করে সেই নথির অপব্যবহার করে হাতিয়ে নেওয়া হতো টাকা। গ্রাহকের নথি ব্যবহার করে দামি ফোন কেনার জন্য প্রথমে লোন তোলা হতো। তার পর লোনের টাকায় ফোন কিনে গ্রাহকের হাতে না দিয়ে সেটা বিক্রি করে দিত প্রতারক। হাতিয়ে নিত ফোন বিক্রির টাকাও। এদিকে গ্রাহকরা ফোনও পেতেন না অথচ মাসে মাসে লোন শোধ করে যেত হতো। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে থানার দ্বারস্থ হন প্রতারিতরা।

    প্রতারণার এই ঘটনায় এ বার মূল অভিযুক্ত পুলিশের জালে। হুগলি জেলার কোন্নগরের বাসিন্দা সৌমিক ভট্টাচার্যকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে বিধাননগর থানার পুলিশ। বহু দিন ধরেই সৌমিক এই প্রতারণা চক্র চালাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাঁর প্রতারণার শিকার হয়েছেন হুগলি জেলার থেকে শুরু করে হাওড়া বিধাননগর কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

    হুগলি জেলার কানাইপুর এলাকার বাসিন্দা অরূপ দে জানান, তিনিও এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁর নামেও কেনা হয়েছে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা দামি ফোন। অরূপ বলেন, ‘এই সৌমিক পার্সোনাল লোন করিয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর একদিন লোন করানো হবে বলে অফিসে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ডানকুনির একটি ফোনের দোকানে নিয়ে যান।’

    সেখানে অরুপকে বলা হয়, প্রথমে তাঁর ডকুমেন্টস দিয়ে একটা যে কোনও জিনিস নেওয়া হবে কিন্তু তার জন্য কোনও টাকা কাটা হবে না। এই বলে অরুপের নামে দামি ফোন নেন সৌমিক। তার পর অরূপকে বলা হয়, কিছুদিনের মধ্যেই লোনের টাকা পেয়ে যাবে। কিন্তু কিছু দিন বাদেই ফোনের EMI কাটার মেসেজ আসতেই মাথায় হাত পড়ে তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমি না ফোন পেয়েছি, না লোনের টাকা পেয়েছি। কিন্তু আমাকে এখন EMI দিতে হচ্ছে। আমাদের মতো বহু মানুষের সঙ্গে এ ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে দোষীর কঠিন সাজা হওয়া দরকার। আর EMI কোম্পানি আমাদের টাকা কাটা বন্ধ করুক।’

    একইরকম ভাবে প্রতারণার শিকার কোন্নগরের আরেক বাসিন্দা মৌমিতা সিং। তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্সোনাল লোন করিয়ে দেওয়ার নাম করে সৌমিক আমাদের পরিবারের আমার, আমার স্বামীর ও আমার মায়ের নামে প্রায় চার লক্ষ টাকার ফোন কিনে নেন আমাদের ডকুমেন্টস ব্যবহার করে। আমাকে সৌমিক বলে, আমার একার নামে বেশি লোন হবে না, তাই আমাদের পরিবারের সকলের নামে ভাগ করে দেওয়া হবে। প্রথমে আমাকে নিয়ে কলকাতা একটি বড় ফোনের শোরুমে নিয়ে গিয়ে সেখানে আমার হাতে একটা দামী ফোন ধরিয়ে ছবি তুলে নেওয়া হয়। তারপর আমায় বলে বাড়ি চলে যেতে কিছু সময় পরে লোনের টাকা পেয়ে যাব।’

    মৌমিতা পাল্টা প্রশ্ন করতে প্রতারক তাঁকে বোঝায়, ফোনের দরকার না থাকলেও এটা প্রথমে করতে হয় কিন্তু এর টাকা কাটা হবে না। যখন লোন হবে শুধু লোনের টাকাই দিতে হবে। কিন্তু কিছু দিন পরেই ওই মহিলার কাছে ইএমআই এর মেসেজ আসে। উল্লেখ্য, মৌমিতা সিংয়ের পরিবারের সঙ্গেই প্রায় চার লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে।

    এই বিষয়ে কোন্নগর পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন দাস বলেন, ‘ছেলেটি আগে নবগ্রাম এলাকায় থাকতো। কিছু বছর এদিকে ফ্ল্যাট কিনে এসেছে। আগেও এর বিরুদ্ধে এসব কথা শোনা যেত। এরা প্রত্যেকেই খুবই উচ্চাকাঙ্খী। হাই-ফাই লাইফস্টাইল ছিল এদের। সৎ পথে নিশ্চই এভাবে জীবন যাপন সম্ভব নয়। তাই আবার প্রতারণা করে মানুষকে বিপদে ফেলছে। এদের কঠিন সাজা হওয়া দরকার। নাহলে এরা পরে আবার এসব কাজ চালিয়ে যাবে।’

    বিধাননগর সিটি পুলিশের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় শুক্লা পরেল নামে একজন একই ধরনের অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তারপরই অভিযুক্তকে হাওড়া দাসনগর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

  • Link to this news (এই সময়)