এই সময়, দিঘা: দুর্গাপুর থেকে দিঘা বেড়াতে এসেছিলেন মানিক রায়। হোটেলে অগ্রিম বুকিং না করেই তিনি দিঘায় এসেছিলেন। আসার পরে জানতে পারেন দিঘায় কোনও হোটেলেই কোনও ঘর নেই। শেষমেশ এক টোটো চালক তাঁকে হোটেলের ঘরের খোঁজ দেন। কিন্তু ভাড়া দ্বিগুন।
বিলও মিলবে না বলে জানানো হয় তাঁকে। একটি কাগজে শুধু ঘর ভাড়া বাবদ টাকার অ্যামাউন্টটা লেখা থাকবে। পরিবার নিয়ে দিঘা বেড়াতে এসে এই শর্তেই রাজি হয়ে যান মানিক। শুধু মানিক নয় এমন ঘটনা এখন দিঘায় প্রায়ই ঘটছে।
অভিযোগ, ভিড় বাড়লেই হোটেলগুলি ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পোর্টালে বেলাগাম হোটেল ভাড়া নিয়ে অভিযোগও জমা পড়েছে। এর পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বাতিল হতে পারে হোটেলের লাইসেন্সও।
মন্দির উদ্বোধনের পরে দিঘায় বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। সপ্তাহান্তে ভিড় আরও বেশি হয়। গত সপ্তাহে ইদের পরে দিঘায় বেশ ভিড় হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দশ বছরে রেকর্ড ভিড় হয়েছিল দিঘায়। সেই সময়ে এমন ঘটনার শিকার বহু পর্যটক।
সামনে রথ। রথেও ভিড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ভিড়ে যেন কোনও পর্যটককে বাড়তি টাকা হোটেলে না দিতে হয়, তাই এই উদ্যোগ। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির আগে দিঘা, মন্দারমণি-সহ উপকূলের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে বছরে ৪০-৫০ লক্ষ পর্যটক বেড়াতে আসতেন।
কিন্তু দিঘাতে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর থেকে গত দেড় মাসে শুধু দিঘাতে মন্দির দেখার জন্য ৩০ লক্ষের বেশি পর্যটক এসেছেন। অভিযোগ, এই সময়ে এক হাজার টাকার ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছে চার হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনও বিল দেননি। দিয়েছে কাগজের এক চিরকুট।
হোটেলগুলির দাবি, এমন ভাবে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি। টোটো, অটো ও রিকশা চালকরা তাঁদের কমিশন নিয়ে ওই টাকা পর্যটকদের কাছে দাবি করেছেন। যা কাম্য নয়।
এক হোটেল মালিক বলেন, ‘দিঘাতে পর্যটকরা নামার পরে টোটো বা অটো চালকরা পর্যটকদের হোটেলে পৌঁছে দেন। আর এই সব টোটো চালকদের অনেকে কমিশনের ভিত্তিতে হোটেলে পর্যটক নিয়ে আসে। পর্যটক হোটেলে আনলেই নগদ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে কমিশন টোটো, অটো চালকদের দিয়ে দিতে হয় হোটেল কর্তৃপক্ষকে।’
মন্দির উদ্বোধনের আগে বাড়তি ভাড়া নেওয়া বন্ধ করতে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ কর্তৃপক্ষ হোটেল মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। তবু প্রশাসনের নির্দেশকে অমান্য করে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠল।
ওল্ড দিঘা হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সহস্রাংশু মাইতি বলেন, ‘এমন অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার নয়। ওল্ড দিঘার ও নিউ দিঘার এনটু সেক্টরের কিছু হোটেল বেশি ভাড়া নিয়েছে বলে শুনেছি।’
দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘যারা আগাম বুকিং করে এসেছেন, তাঁদের কাছ থেকে কোনও হোটেল বাড়তি ভাড়া নেয়নি। সমস্যা হয়েছে যারা অন স্পট হোটেল বুক করেছেন তাঁদের ক্ষেত্রে।
প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। হোটেল ভাড়া নিয়ে পর্যটকরা যে ভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন তাতে দিঘার সুনাম নষ্ট হচ্ছে।’
তা ছাড়া বড় হোটেল ছাড়া অনেক ছোট হোটেল আছে। এই সব হোটেল নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। হোটেলগুলিতে নজরদারি বাড়াতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ পোর্টাল খোলা হয়েছে।
নিয়ম অনুসারে কোনও পর্যটক হোটেলে এলে তার সমস্ত তথ্য ও হোটেল ভাড়ার সমস্ত তথ্য সঙ্গে সঙ্গে এই পোর্টালে আপলোড করতে হবে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি হোটেল ছাড়া বেশির ভাগ হোটেল এখন এই পোর্টাল চালু করেনি।
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নিয়ম অনুসারে হোটেলের কাউন্টারে হোটেলের রুমের সংখ্যা, খালি রুমের সংখ্যা ও ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে রাখার কথা। অভিযোগ, এই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হোটেলগুলি বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন পর্যটকরা পর্ষদের পোর্টালে অভিযোগ জানাতে পারেন। ভাড়া সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগগুলির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।