• বার বার স্কুল বন্ধ হলে সিলেবাস শেষ হবে তো? প্রশ্ন শিক্ষকদের
    এই সময় | ১৩ জুন ২০২৫
  • এই সময়, পাঁশকুড়া: টানা তাপপ্রবাহে নাজেহাল পড়ুয়ারা। মর্নিং স্কুলের দাবিতে শিক্ষা দপ্তরের কাছে আবেদন জানায় একাধিক শিক্ষক সংগঠন। মর্নিং স্কুলের পরিবর্তে আবার স্কুল বন্ধের পথে হাঁটল রাজ্য সরকার।

    আজ, শুক্রবার এবং আগামীকাল শনিবার সমস্ত সরকারি স্কুলে পঠন-পাঠন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল শিক্ষা দপ্তর। পঠন-পাঠন বন্ধ রেখে কী আদৌ সমাস্যার সমাধান খোঁজা সম্ভব? দাবি উঠছে সেই মর্নিং স্কুলের। এ ভাবে স্কুল বন্ধ করে দিলে সিলেভাস শেষ হবে কী করে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

    এক মাস দু’দিনের গরমের ছুটি শেষে গত ২ জুন রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুল খুলে যায়। মে মাসের শেষ থেকে শুরু হয় তাপপ্রবাহ। যা এখনও জারি রয়েছে। রোদের তাপ আর ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের স্বস্তি দিতে ৩ জুন মর্নিং স্কুলের নির্দেশ দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।

    সেই মতো ৪ জুন জেলার সমস্ত প্রাইমারি স্কুল সকালে বসে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ মর্নিং স্কুলের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

    পর্ষদের চাপে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ বাধ্য হয় মর্নিং স্কুলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে। তীব্র গরমের মধ্যে চলছিল প্রাথমিকে ডে স্কুল। দুপুরে স্কুল চলাকালীন জেলার একাধিক স্কুলে গরমে পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে।

    প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে মর্নিং স্কুলের আবেদন জানিয়ে চিঠি দেয় বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে শুক্র ও শনিবার সমস্ত স্কুলে শিখন কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা করেন।

    কিছুক্ষণ পরে স্কুলশিক্ষা দপ্তর নোটিস দিয়ে একই কথা জানিয়ে দেয়। নোটিসে ক্লাস ‘সাসপেন্ড’ করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে ক্লাস সাসপেন্ডের অর্থ পঠন-পাঠন বন্ধ থাকলেও স্কুলে যেতে হবে শিক্ষকদের।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গরমে স্কুলে পঠন-পাঠন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা দপ্তর। তবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্কুলে যেতে হবে।’

    সরকারের এই নির্দেশ ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষা মহলে। কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, ‘এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গরমের ছুটি ছিল। এখন আবার ছুটি দেওয়া হলো। সিলেবাস শেষ হবে কী ভাবে? ছুটি না দিয়ে মর্নিং স্কুল করা যেত।’

    স্কুল ছুটির নির্দেশিকার বিরোধিতা করেছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সতীশ সাউ বলেন, ‘শিক্ষক, অভিভাবক কেউই ছুটি চান না। তা হলে কাদের স্বার্থে আবার স্কুলে ছুটি দেওয়া হলো? সকালে স্কুল হলে পড়ুয়াদের উপর গরমের প্রভাব পড়বে না। রাজ্য সরকার এই ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বনাশ ডেকে আনছে।’

    নতুন করে পঠন-পাঠন বন্ধের নির্দেশে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও। কোলাঘাটের এক অভিভাবক বলেন, ‘সরকারি স্কুলের উপর আর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। গরমের দোহাই দিয়ে এ ভাবে দিনের পর দিন স্কুল ছুটি থাকলে পড়ুয়ারা কী শিখবে? গরমকালে আগে তো তিন মাস মর্নিং স্কুল হতো। এখন হচ্ছে না কেন? অতিরিক্ত ছুটি দিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে না তো?’

  • Link to this news (এই সময়)