সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
গরমে তাদের সুস্থ রাখতে দরদর করে ঘামছেন কর্মীরা। আর তাই শিলিগুড়ির এই চড়া তাপমাত্রায়ও কিন্তু তোফা আছেন বেঙ্গল সাফারির প্রাণীকুল। শিলিগুড়িতে বেলা এগারোটা বাজতে না-বাজতেই তাপমাত্রা চড়চড় করে বেড়ে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলছে।
দুপুর দু’টো নাগাদ তাপমাত্রা ৩৬-৩৯ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু বেঙ্গল সাফারির অন্দরে ঢুকলে কে বলবে বাতাস এতটা তপ্ত। সেখানে কয়েকশো মিটার অন্তর স্প্রিঙ্কলার বসানো হয়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে জলধারা। ছোট ছোট কৃত্রিম পুকুরে ভাসছে বাজার থেকে কিনে আনা বরফের চাঁই।
সারাদিন খিদে পেলেই খাবারের পাত্র থেকে এক ফালি তরমুজ কিংবা শশা মুখে তুলে নিলেই হল। কিন্তু গরম তো কেবল দিনে নয়। রাতেও তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী হয়েই রয়েছে। প্রাণীকুলের ‘নাইট শেল্টার’ বা রাত্রিবাসে বসানো রয়েছে এয়ার কুলার। চারদিক ঢাকা নাইট শেল্টার এই গরমে চেহারা বদলে নিয়েছে।
ছাদের কাছে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ভেন্টিলেটর। শীত-গ্রীষ্মের তফাত বোঝাই দায়। তফাৎ কেবল একটাই। সন্ধ্যা পাঁচটার ডিনার টাইম এক ঘন্টা পিছিয়ে গিয়েছে। বেঙ্গল সাফারির ডিরেক্টর বিজয় কুমার বলেছেন, ‘উত্তরবঙ্গের গরমে কর্মীদের যতই কষ্ট হোক না কেন, প্রাণীদের যাতে কোনও কষ্ট না-হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সমস্ত রকমের ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।’
ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ির এই বেঙ্গল সাফারি গোটা দেশেরই নজর কেড়েছে কেবলমাত্র এর অভিনব ব্যবস্থার জন্যই নয়। কৃত্রিম প্রজননে অভাবিত সাফল্য, নিখুঁত ব্যবস্থাপনা এবং বুনো জন্তুদের দেখানোর ক্ষেত্রে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জন্যও। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের একাংশে কয়েকশো একর জঙ্গলের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে এই সাফারি পার্ক।
প্রতিটি প্রজাতির জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। ৭০ একর জমি রয়েছে কেবলমাত্র হরিণের জন্য। সেখানে খোলাজমি এবং জঙ্গল মিলেমিশে একাকার। বাঘ, সিংহ, ভালুক ও চিতাবাঘের জন্য ২০ একর করে পৃথক ঘেরা জায়গা। গন্ডারের জন্য পৃথক ব্যবস্থা।
এর বাইরে লেজার ক্যাট, নানা ধরনের পাখি, প্রজাপতি পার্ক, কুমির, ঘড়িয়াল মিলিয়ে এক মনোরম এলাকা। সাফারি কর্তৃপক্ষের দেওয়া হিসাব অনুসারে, প্রায় ৮০০ প্রাণী রয়েছে। প্রজাতিগত হিসাবে ৬০ রকমের প্রাণী রয়েছে এখানে।
দর্শনার্থীরা গাড়িতে চড়ে পার্কে ঢুকে প্রাণীদের দেখতে পান। ফলে সারা বছর ভিড় লেগেই থাকে। গত বছর প্রায় তিন লক্ষ দর্শনার্থী ঘুরতে এসেছিলেন এখানে। আয় বেড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলে। এ বারও গরম পড়তেই ভিড় বেড়ে গিয়েছে।
গরমে প্রাণীদের যাতে কষ্ট না-হয় সে জন্য চেষ্টার কসুর করছেন না কর্তৃপক্ষ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা এখন ১১। দু’টি করে রোজ ছাড়া হয়। নাইট শেল্টার থেকে বার হয়েই দুটিতে হাঁটা দেয় কৃত্রিম পুকুরে। বরফে ঠান্ডা করা জলে গা ডুবিয়ে বসে থাকে।
স্প্রিঙ্কলারের চারপাশ গিরে বসে থাকে হরিণের পাল। ডিরেক্টর বলেন, ‘পার্কের ভিতরে বুনোদের কত যে কাণ্ড সারাদিন ঘটতে থাকে তার হিসাব নেই। সারাদিনই প্রতিটি প্রাণীকে নজরে রাখা হয়।’