• নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের করোনা এখন বাংলাতেও, বলছে জিনোম
    এই সময় | ১৩ জুন ২০২৫
  • এই সময়: শুধু চিন, হংকং, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা আমেরিকা নয়। সেখানে তো আগেই ছড়িয়েছিল। এ দেশের করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জেএন.১ উপপ্রজাতির পরবর্তী প্রজন্মের ভাইরাস এখন যে সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দায়ী, তাও দেখা গিয়েছে ইন্ডিয়ান সার্স কোভ-২ জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম (ইনসাকগ)-এর রিপোর্টে।

    মূলত তা মিলেছিল পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে। এ বার দেখা গেল, বাংলাও সামিল সেই তালিকায়। মোট ৪৯টি কোভিড পজ়িটিভ নমুনায় মিলেছে জেএন.১ উপপ্রজাতির পরবর্তী প্রজন্ম এক্সএফজি।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উপপ্রজাতির ভাইরাস খুবই সংক্রামক চরিত্রের, করোনার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ইমিউনিটিকে ফাঁকি দিতেও পটু। তবে মারাত্মক একেবারেই নয়।

    কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর প্রাক্তন অধিকর্তা বলরাম ভার্গব জানিয়েছেন, ইনসাকগের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে মোট এক্সএফজি মিলেছে ২০৬টি নমুনায়। সবচেয়ে বেশি এক্সএফজি সাব-ভ্যারিয়েন্টের ভাইরাস মিলেছে মহারাষ্ট্রে (৮৯)। তার পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (৪৯)।

    স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, আগেই ৬টি নমুনায় এক্সএফজি মিলেছিল ইনসাকগের অধীন কেন্দ্রীয় সংস্থা কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স (এনআইবিএমজি)-এর ল্যাবে।

    মঙ্গলবার আরও ৪৩টি নমুনায় ভাইরাসের ওই একই সাব-ভ্যারিয়েন্ট দেখা গিয়েছে। ভার্গভ আরও জানিয়েছেন, এক্সএফজি মেলার নিরিখে বাংলার পরে রয়েছে তামিলনাড়ু (১৬), কেরালা (১৫), গুজরাট (১১), অন্ধ্রপ্রদেশ (৬), মধ্যপ্রদেশে (৬), ওডিশা (৪), পুদুচেরি (৩), দিল্লি (২), রাজস্থান (২), পাঞ্জাব (১), তেলঙ্গানা (১) ও হরিয়ানা (১)।

    তবে ভার্গব বলেন, ‘ভাইরাসের নতুন এই রূপটি সংক্রমণ ছড়াতে পটু হলেও তেমন বাড়াবাড়ি উপসর্গের জন্ম দিতে সক্ষম নয়।’ একই সুর চিকিৎসকদের গলাতেও। এসএসকেএমের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, ২০২২ সালে ওমিক্রনের আবির্ভাবের সময় থেকেই অতিমারী পর্বের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছিল।

    ওমিক্রনের জেএন.১ কিংবা অন্যান্য উপপ্রজাতির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখা গিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘বর্তমানে সেই জেএন.১ উপপ্রজাতির যে সব পরবর্তী প্রজন্মের এলএফ.৭, এনবি.১.৮.১ এবং এক্সএফজি ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তার জনক কিন্তু সেই ওমিক্রনই। ফলে করোনার প্রকোপ কিংবা কামড়ের বহর কখনোই বাড়াবাড়ি রকমের হবে না। যে সব রোগী পাচ্ছি, তাঁদের অধিকাংশই মৃদু উপসর্গের।’

    বাস্তবেও তা–ই দেখা গিয়েছে। ২০২২-এ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আত্মপ্রকাশ করার পরে ধারাবাহিক ভাবে তার একের পর এক প্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছে। ২০২২-এ আসে বিএ.২ ও বিএ.৫ সাব-ভ্যারিয়েন্ট। ২০২৩-এ আসে বিএফ.৭ উপপ্রজাতি। ২০২৪–এর গোড়ায় আত্মপ্রকাশ করে জেএন.১ এবং বছর শেষে দেখা যায় রমরমা কেপি.২ উপপ্রজাতির ভাইরাসের।

    আর চলতি বছরে প্রথম দিকে এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮.১ উপপ্রজাতি দাপিয়ে বেড়ালেও এখন বাজার দখল করেছে এক্সএফজি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। সংক্রণ ছড়ানো কিংবা ইমিউনিটি ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা থেকে শুরু করে অসুস্থতার তীব্রতা, সবেতেই এই সাত-আটটি উপপ্রজাতির মধ্যে ওমিক্রনেরই ছায়া দেখা গিয়েছে।

    ফলে সংক্রমণ ছড়ালেও তা সে ভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারেনি অতিমারী পর্বের প্রথম দিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপাদাপির মতো।

    কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক–চিকিৎসক সৌগত ঘোষ বলেন, ‘ওমিক্রনের যত মিউটেশন ঘটেছে, দেখা গিয়েছে, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে ততই বেড়েছে একের পর এক পরিবর্তন। এক্সএফজি সাব–ভ্যারিয়েন্টেও তেমনটাই দেখা যাচ্ছে।

    ফলে শরীরে গড়ে ওঠা ইমিউনিটিকে সহজেই ফাঁকি দিয়ে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে এক্সএফজি। কিন্তু বেশি অসুস্থ করে তুলছে না মানুষকে। সারা দুনিয়াতেই তা–ই হয়েছে। বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়।’

    তিনি জানাচ্ছেন, এই ভাইরাস যেহেতু অতিসংক্রামক, তাই ভিড়ে গেলে মাস্ক ব্যবহার করাই উচিত সকলের। তাতে কিছুটা হলেও সতর্ক থাকা যায়।

  • Link to this news (এই সময়)