• ক্যান্সার মৃত্যু তরুণীর, দেহই নিল না পরিবার
    এই সময় | ১৩ জুন ২০২৫
  • এই সময়, রহড়া: ক্যান্সার আক্রান্ত এক তরুণীর মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করল পরিবার। প্রায় ছ’ঘণ্টা বাড়ির বাইরে পড়ে রইল দেহ৷ অবশেষে মৃতার কয়েকজন বন্ধু এবং পুলিশের সহযোগিতায় ওই তরুণীর দেহ সৎকার করা হয়।

    বুধবার রাতে অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে খড়দহ পুররসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রহড়া পূর্বাচলে। মৃত তরুণীর নাম সায়ন্তী দাস (৩৪)। খড়দহের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন তিনি।

    পূর্বাচলে নিজেদের বাড়িতে দাদা-বৌদির সঙ্গেই থাকতেন ক্যান্সার আক্রান্ত সায়ন্তী। তবে দাদা-বৌদির সঙ্গে তাঁর খুব একটা বনিবনা ছিল না। অভিযোগ, সম্পত্তিগত বিষয় নিয়ে দাদা ও বৌদির সঙ্গে প্রায়ই তাঁর বিবাদ লেগে থাকত। বিবাহিত দিদির সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না।

    একদিকে মারণ রোগ এবং আর একদিকে পারিবারিক অশান্তির জ্বালা নিয়ে মাস কয়েক আগে বাড়ি ছেড়ে খড়দহেই টিনা ওঝা নামে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন সায়ন্তী। বন্ধুর বাড়িতে থেকেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল।

    সম্প্রতি তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। হাসপাতাল থেকে বন্ধুর বাড়িতে ফিরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন সায়ন্তী। বুধবার বিকেলে ওই বন্ধুর বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। বন্ধু টিনা ওঝার অভিযোগ, সায়ন্তীর অসুস্থতার খবর তাঁর দাদা শান্তনু দাসকে জানানো হলেও বোনকে দেখতে আসা তো দূর, কোনও সাহায্য তিনি করেননি।

    বুধবার দাদা-বৌদির কাছে সায়ন্তীর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে দেন তাঁরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বন্ধুরাই সায়ন্তীর মৃতদেহ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেখেন দাদা-বৌদি বাড়িতে নেই। ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা বন্ধ।

    তা হলে কি বোনের মৃতদেহ নেবেন না বলেই বাড়ি ছেড়েছেন দাদা-বৌদি? সেই আশঙ্কাই করছেন বন্ধু-সহ স্থানীয়রা। প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে দেহটি বাড়ির বাইরেই পড়ে ছিল।

    প্রতিবেশী প্রশান্ত দাস বলেন, ‘সম্পত্তিগত বিষয় নিয়ে ওদের পরিবারে ঝামেলা ছিল। মাস কয়েক হলো অন্যত্র থাকছিল অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের সায়ন্তী। কিন্তু ওঁর দুর্ভাগ্য যে, মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দাদা-বৌদি দরজা বন্ধ করে চলে গিয়েছে।

    দিদি সুমিত্রা দে-কে ফোন করা হলে তিনিও দেহ নিতে রাজি হননি। এর চেয়ে অমানবিক কী হতে পারে?’ টিনা বলেন, ‘সায়ন্তীর মৃত্যুর খবর জানিয়ে ওঁর দাদা-দিদিকে ফোন করা হলেও কেউ রেসপন্স করেননি। অসহায় হয়ে মরদেহ নিয়ে ওদের বাড়ির বাইরে ছ’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

    শেষ পর্যন্ত রহড়া থানার পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশের তরফেও একাধিকবার দাদা-দিদিকে ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁরা সাড়া দেননি। অবশেষে পুলিশ, বন্ধু ও পড়শিদের তৎপরতায় ওই তরুণীর দেহ পানিহাটি শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করা হয়।

    ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মধ্য) ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, ‘অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। বন্ধুরা জানিয়েছেন, মেয়েটির শেষ ইচ্ছা মতো তাঁর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু পরিবারের লোকেরা দেহ নিতে অস্বীকার করায় নিয়ম মেনে ওই তরুণীর দাহকার্য করা হয়েছে। মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’

  • Link to this news (এই সময়)