একসঙ্গে থাকা খাওয়া, মৃত্যুও একসঙ্গেই, হরিহর আত্মা দুই বন্ধু মারা গেলেন হাত ধরাধরি করেই...
আজকাল | ১৩ জুন ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: হরিহর আত্মা দুই বন্ধুকে এলাকার মানুষ সবসময় একসঙ্গেই দেখত। সমবয়সী দু'জনে কয়েকবছর আগে একসঙ্গে নেশা করাও শুরু করেন বলে এলাকাবাসী জানায়। আর মৃত্যুর সময়ও দুই বন্ধু ধরে রাখলেন পরস্পরের হাত।
বৃহস্পতিবার কাকভোরে বন্ধুর সঙ্গে রেললাইন ধরে ঘুরতে বের হয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল দুই যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদ এবং জিয়াগঞ্জ স্টেশনের মধ্যবর্তী এনাতুলিবাগ এলাকায়।
বহরমপুর জিআরপি থানা সূত্রে জানা গিয়েছে ,মৃত দুই যুবকের নাম ইরফান আনসারী( ১৯) এবং সুজয় ঘোষ (১৮)। ইরফানের বাড়ি জিয়াগঞ্জ থানার অন্তর্গত মরিচপাড়া ফুলতলা এলাকায় এবং সুজয়ের বাড়ি ভেলাডাঙ্গা-ঘোষপাড়া গ্রামে।
প্রসঙ্গত, মাত্র একদিন আগে জিয়াগঞ্জ ও পীরতলা হল্ট স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় সেলফি তুলতে এবং সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার জন্য রিলস বানাতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ২ কিশোরের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কাকভোরে লালগোলা থেকে রানাঘাটগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দুই যুবকের। তাঁদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
বহরমপুর জিআরপি থানার এক আধিকারিক জানান, যে ট্রেনটিতে এই দুর্ঘটনা হয়েছে তার চালক জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে দু'জন যুবককে রেল লাইনের উপর হাঁটতে দেখে তিনি বহুবার হর্ন দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই দুই যুবক লাইন থেকে সরে যাননি। কী কারনে তাঁরা এই অদ্ভুত আচরণ করেছে তা নিয়ে সন্ধিহান রেল পুলিশ।
পুলিশের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, মৃত দুই যুবকের কানে কোনও হেডফোন ছিল না। ফলে তারা যে ট্রেনের হর্ন শুনতে পাননি এমন নয়। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পুলিশ দেহ দু'টি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
মৃত ইরফান আনসারীর মা হীরা বিবি বলেন,'মাত্র দু'মাস আগে আমার ছেলে বিয়ে করেছে। তার আগে সে নিয়মিত নেশায় আসক্ত ছিল এবং বেশিরভাগ সময় সুজয়ের সঙ্গে থাকত। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সারারাত ফিরে আসেনি। আজ সকালে ট্রেন দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। '
অন্যদিকে সুজয় ঘোষের ঠাকুমা সান্ত্বনা ঘোষ বলেন।,'সুজয় মাদকের নেশায় আসক্ত ছিল। গত দু-তিন বছর ধরে নিয়মিত নেশা করছিল। এই কারণে তাকে বেশ কয়েকবার জেলে যেতেও হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সুজয় তার বন্ধুদের সঙ্গে নেশা করত।' তাঁদের অনুমান গতকাল রাতেও ইরফান এবং সুজয় একসঙ্গে বসে নেশা করেছেন। এরপর নেশার ঘোরেই তাঁরা ট্রেন লাইন ধরে ভোরবেলায় হাঁটতে শুরু করেন।
রেল সূত্রের খবর ,জিয়াগঞ্জ স্টেশনের কাছে ১৪৯ এবং ১৫০ নম্বর গেটের মধ্যবর্তী এলাকায় একটি বড় বাঁক রয়েছে। সেখানে ওই দুই যুবক হাতে হাত ধরে হাঁটছিলেন। সেই সময় লালগোলা থেকে রানাঘাটগামী ট্রেনটি দ্রুত গতিতে গিয়ে তাঁদের ধাক্কা মারে।