দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি! চলতি সপ্তাহে দু’দিন স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য
আনন্দবাজার | ১২ জুন ২০২৫
উত্তরের জেলাগুলিতে আগাম বর্ষা ঢুকে গেলেও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রবেশের নামগন্ধ নেই। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে নাজেহাল পশ্চিমের জেলাগুলিও। কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। সেই আবহেই এ বার দু’দিনের জন্য রাজ্যের স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করল সরকার।
বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সমাজমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে এই খবর জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যের পার্বত্য জেলাগুলি ব্যতীত অন্য সমস্ত জেলার সরকার এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে চলতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকবে। ওই দু’দিন রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠন হবে না। তাপপ্রবাহের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও সংসদ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের ওই দু’দিন স্কুলে যেতে হবে কি না, তা ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা নেই। ফলে এ নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
প্রায় মাসখানেকের গরমের ছুটির পর ২ জুন থেকে রাজ্যের স্কুলগুলি খুলেছে। কিন্তু এই ক’দিনেই তীব্র গরমে নাজেহাল হচ্ছিল পড়ুয়ারা। সপ্তাহখানেক আগে গরমের কারণে একাধিক জেলায় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সকালে ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যালয় সংসদ (ডিপিএসসি)। সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবং শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পঠনপাঠন চলবে বলে জানানো হয়। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। পরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করার কথা জানায়। অথচ দুপুরে ক্লাস করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিকের পড়ুয়াদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসছিল। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগও দায়ের হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখার জন্য সরকারকে চিঠি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ঘটনাচক্রে, তার পরেই এই সিদ্ধান্ত জানাল রাজ্য।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পরিষদের সভাপতি গৌতম পাল জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের আইন মেনে কাজ করতে হয়। ডিপিএসসিগুলি নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। প্রথমে পশ্চিমাঞ্চলের দু’-একটি জেলা থেকে অভিযোগ আসছিল। গত কয়েক দিনে অতিরিক্ত গরমের কারণে একাধিক জেলা থেকে ছাত্রছাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর এসেছে। তাই আমরা সরকারকে চিঠি দিয়েছি। সরকার সেই মতো সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।’’
অন্য দিকে, এ বিষয়ে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসের ৩০তারিখ থেকে যখন গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখনই আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম, এত আগেভাগে কেন গরমের ছুটি দেওয়া হচ্ছে। পুরো মে মাস জুড়েই যথেষ্ট ভাল আবহাওয়া ছিল। আর ঠিক যখন প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিস্থিতি, তখন স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। তার চেয়ে এই খামখেয়ালিপনা বন্ধ করে পুরো বিষয়টা আগামী দিনে স্কুলের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হোক।’’