• DA-নির্দেশ: ব্যাখ্যা চেয়ে রাজ্য সুপ্রিমে, দায়ের মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন
    এই সময় | ১২ জুন ২০২৫
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর জন্য হাতে সময় বাকি আর মাত্র ১৯ দিন। ৩০ জুন সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী রবিবার, অর্থাৎ ১৫ জুনের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর ব্যাপারে রাজ্য কী করছে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে।

    তার আগেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশের পরিমার্জন চেয়ে (মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন) শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলো। সূত্রের দাবি, এই আবেদনে রাজ্যের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ডিএ নির্ধারণের মাপকাঠি ঠিক কী, তা অন্তর্বর্তী রায়ে স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে আরও বিশদ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে রাজ্যের আবেদনে।

    নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতের কাছে জানতে চেয়েছে, কোন ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট কতদিনের ও কত টাকার বকেয়ার উপরে এই ২৫ শতাংশের হিসেব করা হবে। এই অস্পষ্টতা দূর করতেই সুপ্রিম কোর্টের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে।

    সুপ্রিম কোর্টে এখন গরমের ছুটি ছলছে। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আদালত খুলবে। মনে করা হচ্ছে, রাজ্য সরকার মডিফিকেশনের আর্জি পেশ করলেও তা নিয়মমাফিক শুনানি হতে আরও সময় লাগবে। তাই সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা নেই।

    বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে রাজ্য সরকার এখনও কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। তবে বিভিন্ন দপ্তর থেকে কত সংখ্যক সরকারি কর্মচারী এই বকেয়া পাওয়ার যোগ্য, তার একটা তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

    ২৫ শতাংশ বকেয়া এখন মিটিয়ে দেওয়া হলেও আগামী দিনে মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের ‘অনুকূলে’ কোনও নির্দেশ দিলে তখন সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে। নবান্নের কর্তারা মনে করছেন, গরমের ছুটি শেষ হলেই এই মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনের উপরে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি হতে পারে।

    ‘অনুকূলে রায়’-এর অর্থ কী?

    আইনজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, যদি বকেয়া ডিএ–র এই ২৫ শতাংশ অর্থ অথবা আগামী দিনে পুরো বকেয়া ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট ভিন্ন অবস্থান নেয়, তা হলে রাজ্যের আর্থিক অবস্থার উপরে এতটা চাপ পড়বে না।

    প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে ডিএ শুনানির সময়ে রাজ্যের কৌঁসুলিরা একাধিকবার আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়েছেন। মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনে রাজ্যের ‘অনুকূলে’ রায় গেলে তখন এই ২৫ শতাংশ বাবদ টাকা ফেরত নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

    নবান্ন সূত্রের খবর, দেশের সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী রায় নিয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তারা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা সকলেই একটা ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী রায় নিয়ে ‘মডিফিকেশন’ চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

    তা ছাড়া অন্তর্বর্তী রায়ের কয়েকটি ক্ষেত্রে আরও বিশদ ব‌্যাখ‌্যা পাওয়া গেলে রায় কার্যকর করা সহজ হবে। তবে ডিএ সংক্রান্ত মূল মামলাটি যেমন চলছে, তেমনই চলবে। শীর্ষ আদালতও আগের শুনানিতে জানিয়ে দিয়েছে, ডিএ সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার কি না, এই ব্যাপারে তাঁরা আগামী দিনে শুনানি করবেন। তবে তার আগে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ আটকে রাখা যায় না।

    মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের দাবি, বুধবার পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনের নথি তাঁদের হাতে পৌঁছয়নি। সেটা পেলে তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন। আইনজ্ঞদের বক্তব্য, মামলা সদ্য ফাইল হয়েছে। সেটা সুপ্রিম কোর্ট যতক্ষণ না গ্রহণ করছে, ততক্ষণ মামলাকারীদের কাছে নোটিস বা মামলার নথি আসবে না।

    প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার ডিভিশন বেঞ্চ গত ১৬ মে অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টের ২০২২ সালের রায় মেনে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে ছ’সপ্তাহের মধ্যে। পঞ্চম বেতন কমিশন চালু হয়েছিল ২০০৮–এর ১ এপ্রিল।

    এর রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট দেওয়া হয়েছিল ২০০৬–এর ১ জানুয়ারি থেকে। সেই সময় থেকে ২০১৫–এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ দশ বছরের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দিতে বলা হয়েছে অন্তর্বর্তী রায়ে। মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের দাবি, রিভিশন অফ পে অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স (রোপা), ২০০৯ অনুযায়ী এই ডিএ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

  • Link to this news (এই সময়)