এই সময়, কাকদ্বীপ: নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় হুহু করে বাড়ছে ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ জলসীমান্ত পেরিয়ে চোরাপথে এ দেশে ঢুকে পড়া বাংলাদেশিরা গড়ে তুলেছে একের পর এক কলোনি, বসতি।
কাকদ্বীপের আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠেছে এমন অসংখ্য বাংলাদেশি কলোনি। অনেক জায়গায় সেই সব কলোনি গড়ে উঠছে সুন্দরবনের প্রকৃতির রক্ষক ম্যানগ্রোভের জঙ্গল ধ্বংস করে।
কাকদ্বীপে কান পাতলেই শোনা যায়, বাংলাদেশিদের বসতি স্থাপন থেকে ভোটার কার্ড তৈরি, শাসক দলের আনুগত্য না পেলে কিছুরই ছাড়পত্র মেলে না। তাই বাংলাদেশ থেকে আসা অসংখ্য উদ্বাস্তু মানুষ কী ভাবে ভোটার কার্ড তৈরি করেছেন তার উত্তর দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বসিরহাট থেকে দালাল ধরে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢুকে পড়ছে এ রাজ্যে। অনেকেই সুন্দরবনের নদীপথ ব্যবহার করছে।
কাকদ্বীপে আসার পর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও প্রতাপাদিত্য গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা নতুন করে গড়ে ওঠা বেশ কিছু কলোনিতে গিয়ে উঠছে এই অনুপ্রবেশকারীরা।
নদীর চর দখল করে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল কেটে গড়ে উঠেছে গ্রামের পর গ্রাম। হাজার, হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে নদীর চর।
পূর্ব স্টিমারঘাট বাংলাদেশি কলোনির বাসিন্দা, পেশায় মৎস্যজীবী কৃষ্ণপদ হালদার বলেন, ‘ছোটবেলায় বসিরহাট হয়ে কাকদ্বীপে চলে আসি। আগে ভাড়ায় থাকতাম। এখন এই কালনাগিনী খালের তটে চার শতক জায়গা কিনে কোনও রকমে ত্রিপল দিয়ে মাথা গোঁজার আশ্রয় গড়ে তুলেছি।
প্রথম যখন বর্ডার পার করে ভারতে আসি তখন কল্যাণীতে মাসির বাড়িতে উঠেছিলাম। তাদের থেকেই ভোটার কার্ড হয়েছিল ওখানে। এখন কাকদ্বীপে তৃণমূলের নেতাদের ধরে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের পাশে জায়গাটুকু কিনতে পেরেছি।’
কৃষ্ণপদর প্রতিবেশী আর এক মৎস্যজীবী বছর ত্রিশের বিকাশ দাস বলেন, ‘আমার জন্মের আগে বাংলাদেশ ছেড়ে বাবা-মা চলে এসেছিল এ দেশে। কুলতলিতে আমার জন্ম। বিয়ে করেছি, কিন্তু আমার এবং আমার স্ত্রীর ভোটার কার্ড আজও হয়নি।’
আতঙ্ক মেশা গলায় বিকাশ বলেন, ‘এখন বাংলাদেশিদের নিয়ে এখানে যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যদি আমাদের তাড়িয়ে দেয় তো চলে যাব। আর যদি আমাদের রাখে তা হলে নাগরিকত্ব দিয়ে বাঁচার সুযোগ করে দিক সরকার।’
কাকদ্বীপে ভুয়ো ভোটার বৃদ্ধির পিছনে ‘দুষ্টচক্র’ ও সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। বাংলাদেশি কলোনিগুলিতে কান পাতলেই সেই দুষ্টচক্রের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।
শাসকদলের এক বুথ সভাপতি কিশলয় দাসের সাফাই, ‘এই সমস্ত কলোনিগুলো গড়ে উঠেছে ৮০ থেকে ৯০ দশকে সিপিএমের আমলে। এই আমলে হাতে গোনা। কাকদ্বীপে যেখানে জমির মূল্য আকাশছোঁয়া সেখানে কেউ কেউ হয়তো কয়েক হাজার টাকা নিয়েছে। বাংলাদেশিদের ভোটার কার্ড, আধারকার্ড, রেশন কার্ড তৈরির চক্র বসে আছে এসডিও, বিডিও অফিসে।’
যদিও ডিওয়াইএফআই নেতা স্বপ্নময় সাহা বলেন, ‘সিপিএমের আমলে যারা এসেছিল তারা কেউ নাগরিকত্ব পায়নি। আর তৃণমূল সরকারের আমলে হাজার হাজার বাংলাদেশি কাকদ্বীপে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে। এর পিছনে তৃণমূল নেতাদের হাত রয়েছে। এদের ভোটেই তৃণমূল ভোট বৈতরণী পার হয়।’
একই দাবি কাকদ্বীপের হিন্দু সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি সম্রাট পড়ুয়ার। তিনি বলেন, ‘কাকদ্বীপে বাংলাদেশিদের ভিড়ে এ দেশের মানুষজন সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। ও পার বাংলার জিহাদিরা ধর্ম পরিচয় বদলে কাকদ্বীপে বসবাস যে করছে না, তা কেউ হলফ করে বলতে পারবে?
অবিলম্বে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের পুশব্যাক করা হোক। তা না হলে সুন্দরবনের উপকূল এলাকার জনবিন্যাস বদলে যেতে পারে।’