এই সময়, দুর্গাপুর: এক বিড়াল একটি মুরগির বাচ্চাকে আক্রমণ করে খেয়ে ফেলেছে। এটা আদৌ কোনও ঘটনা কি না, তা নিয়ে তর্ক হবেই। কিন্তু সেই ঘটনাকে ঘিরে বুধবার দুর্গাপুর পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সোনারতরী এলাকায় যা ঘটল, তা চমকে দেওয়ার মতো।
ঘটনা নিয়ে দুই পরিবারের সদস্যরা প্রথমে জড়ালেন বচসায়, ক্রমে তা পরিণত হয় মারামারিতে। বিবাদের জল শেষ পর্যন্ত থানা থেকে আদালতে গিয়ে থামল। প্রথমে গ্রেপ্তার হন মুরগির মালিক মানব ভুঁইমালি, যিনি আবার জামিনও পেয়ে গেলেন!
মঙ্গলবার রাতে বিড়ালের মালিক রাজশ্রী রায় হলেন গ্রেপ্তার। বুধবার সকালে রাজশ্রীকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন!
প্রবল গরমের জন্য বুধবার থেকে দুর্গাপুর আদালতে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। ফলে রাজশ্রীর হয়ে কোনও আইনজীবী ছিলেন না আদালতে। পরে রাজশ্রীর আইনজীবী অরিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘দুই অভিযুক্তই স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। আর আমার মক্কেল রাজনীতির শিকার হলেন। বুধবার থেকে সিজ় ওয়ার্ক শুরু হয়েছে। তা জানার পরেও রাজশ্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি সুবীর রায় বলেন, ‘দু’জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এক অভিযুক্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। খোঁজ চলছে।’ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোনারতরী এলাকার বাসিন্দা রাজশ্রীর বাড়িতে কয়েকটি বিড়াল ও কুকুর আছে। তাঁর দাবি, কুকুরগুলিকে বেঁধে রাখা হয়। এলাকার আর এক বাসিন্দা মানবের অভিযোগ, রাজশ্রীর বাড়ির বিড়াল তাঁর একটা মুরগির বাচ্চা খেয়ে ফেলেছে। এ নিয়েই গন্ডগোলের সূত্রপাত।
রাজশ্রীর পরিবারের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় মানব ও ছোটুর। রাজশ্রীর অভিযোগ তাঁকে, তাঁর মা এবং বোনকে মারধর করে মানব ও ছোটু। দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজশ্রী। পাল্টা মানবও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীকে মারধর করার জন্য রাজশ্রী-সহ তাঁর বাবা মা ও বোনের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ করেন।
৮ জুন রাতে মানবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার পরেই এলাকা ছেড়ে পালায় ছোটু। মঙ্গলবার জামিনে মুক্তি পায় মানব। এ দিন আদালতে তোলা হলে রাজশ্রী বলেন, ‘মানব ও ছোটুর অভিযোগ মিথ্যা। বরং ওরা মা, বোন এবং আমাকে মারধর করেছে। মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি।’
ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে একাধিক পশুপ্রেমী সংগঠন। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের এক পশুপ্রেমী প্রসেনজিৎ দত্ত গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন রাজশ্রীদের সঙ্গে।
তিনি বলেন ‘বাড়িতে কুকুর, বিড়াল পোষা যাবে না বলে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি পুরসভা। ঠিক ভাবে তদন্ত না–করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজশ্রীকে। মনে হচ্ছে এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।’