এই সময়: প্রবল গরমে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলায় প্রায় রোজই খুদে পড়ুয়াদের মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারানো, বমি-বমি ভাব এবং দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
এই অবস্থায় প্রাথমিকে দুপুরের বদলে সকালে ক্লাস চাইছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে অভিভাবকদেরও একটা বড় অংশ। এ দিকে বুধবারই স্কুলশিক্ষা কমিশনার রাজ্যের সব জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে নির্দেশে জানিয়েছেন, গরমে স্কুলগুলিকে দুপুরের দিকে ব্যায়াম ও খেলাধুলোর ক্লাস এড়িয়ে চলতে হবে।
এ ব্যাপারে নজর রাখতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
কয়েক দিন আগেই একাধিক জেলা বিদ্যালয় সংসদ (ডিপিএসসি) প্রাথমিক স্কুলগুলিতে মর্নিং সেকশন চালু করতে চেয়েছিল। তখন তাতে আপত্তি জানিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
এ দিন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘আমরা গরমের ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। প্রাথমিকে সকালে স্কুল চালু করার ব্যাপারে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। বিকাশ ভবনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কোনও পড়ুয়াই যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে, সেটা দেখতে হবে আমাদের।’
গৌতমের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। তাই কয়েকটি ডিপিএসসি নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বারণ করা হয়েছিল।’ বাঁকুড়া ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান শ্যামল সাঁতরা স্কুলগুলিতে সকালে পঠনপাঠন শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
একই নির্দেশ দেন পুরুলিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের ডিপিএসসি চেয়ারম্যানরাও। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সেই নির্দেশ বাতিল করে দুপুরেই স্কুল চালানোর নির্দেশ দেয়।
এ দিকে বাঁকুড়ার শালতোড়া চক্রের পাটদোহা, মড়লু, শ্যামদাসপুরের প্রাইমারি স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই সব এলাকায় অনেক পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম দক্ষিণচক্রের সোনাচূড়া বোর্ড প্রাইমারি স্কুলে প্রার্থনা চলাকালীন এক ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।
মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা-১ ব্লকের লোকসেবা সমিতি নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে ক্লাসেই মাথা ঘুরে পড়ে যায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী অর্চনা টুডু। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া দক্ষিণচক্রের কামিনাচক-২ নম্বর প্রাইমারি স্কুলে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী।
অবিলম্বে মর্নিং স্কুলের দাবিতে মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শককে স্মারকলিপি দেয় বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, অন্য বছর এপ্রিল, মে ও জুনে বাঁকুড়া-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় সকালে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও এ বার কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই তা বাতিল করা হয়েছে। ফলে প্রচণ্ড গরমে স্কুলে এসে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের বাঁকুড়ার সভানেত্রী স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এতে ভীষণ খারাপ লাগছে। আমরা ডিপিএসসি–র চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে বারবার জানিয়েছি। কেন মর্নিংয়ে ক্লাস চালু করা হচ্ছে না, তা বোঝা যাচ্ছে না।’
অভিভাবকদেরও অনেকে চাইছেন, যত দিন না আবহাওয়া স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন অন্তত স্কুলগুলিতে সকালে ক্লাস হোক।