• যেখানে জীবন্ত হয়ে ফেরে 'মৃত' কলম! জানেন কোথায় এই দোকান?...
    আজকাল | ১২ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: চৌরঙ্গি রোডের এক সরু গলির ভিতরে লুকিয়ে থাকা এক আশ্চর্য দোকান গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে নিঃশব্দে সংরক্ষণ করে চলেছে কালি আর কলমের ঐতিহ্য। ‘পেন হসপিটাল’ নামেই বেশি পরিচিত এই দোকান কোনও সাধারণ দোকান নয়—এটি যেন হাতে লেখা শব্দের প্রতি ভালোবাসার এক নীরব শপথ।

    ১৯৪৫ সালে বিহার থেকে কলকাতায় আসা মহম্মদ শামসুদ্দিন এই দোকানটি শুরু করেন। তারপর থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই কলম সারাইয়ের কাজ। বর্তমানে দোকানটি চালাচ্ছেন তাঁর নাতি মহম্মদ ইমতিয়াজ, যিনি তাঁর পিতা মহম্মদ সুলতান ও প্রয়াত ভাই মহম্মদ রইজের কাছ থেকে ব্যবসার হাল ধরেন আশির দশকে। এখন তিনি তাঁর ছেলে ও ভাইপোর সঙ্গে এই পরিবারিক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন।

    ছোট্ট দোকানটি যদিও জায়গায় সীমিত, তবে তার সংগ্রহ অভাবনীয়। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০,০০০ টাকারও কলম এখানে পাওয়া যায়। পার্কার, মন্ট ব্লাঁ, পাইলট, শেফার, ওয়াটারম্যান, সুয়ান, পিয়ের কারদাঁ, ব্ল্যাকবার্ড, উইলসন, পেলিকান—দেশি ও বিদেশি ব্র্যান্ডের কলমে ঠাসা কাঠের আলমারি যেন ইতিহাসের ঝাঁপি খুলে বসে।

    একটি কাঁচের কাউন্টারই এখানে অপারেশন টেবিল। সেখানেই ইমতিয়াজ মশাই হাতে নেন তার যন্ত্রপাতি—ম্যাগনিফাইং লেন্স, একগুচ্ছ পিনসেট, স্ক্রু ড্রাইভার আর ধৈর্য। খুঁটিনাটি মেরামতি করে ফের জীবন্ত করে তোলেন পুরনো কলমগুলো। “১৯৩০-৪০-এর দশকের কলমও বিক্রি হয়েছে আমাদের দোকান থেকে,” বলেন তিনি, চোখে একরাশ গর্ব।

    এই দোকান শুধু মেরামতির জায়গা নয়, এটি হয়ে উঠেছে কলকাতার কলমপ্রেমীদের মিলনস্থল। লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, রাজনীতিবিদ, বিচারক, অধ্যাপক থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী—সবারই নির্ভরতার ঠিকানা এটি। কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়-ও একবার তাঁর কলম মেরামত করাতে এনেছিলেন এখানে।

    যদিও প্রযুক্তির জোয়ারে কাগজ-কলমের ব্যবহার অনেক কমেছে, তবু ইমতিয়াজের মনে আশার আলো। “নতুন প্রজন্মের মধ্যে আবার কলমের প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটাই আমাদের প্রেরণা,” বলেন তিনি। কলমপ্রেমীদের কাছে পেন হসপিটাল কেবল দোকান নয়, এটি এক নস্টালজিয়ার আশ্রয়স্থল, যেখানে এখনো কালি গড়ে তোলে সম্পর্ক, স্মৃতি ও সংস্কৃতি।
  • Link to this news (আজকাল)