এই সময়: মেট্রোর মতোই লোকাল ট্রেন স্টেশনে এসে দাঁড়ানোর পরে স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে গেল দরজা। যাত্রীরা ওঠা–নামার পরে ওই দরজা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। তারপরেই স্টেশন ছেড়ে গেল লোকালটি। ভিড়ের চাপে যাত্রীরা যাতে চলন্ত ট্রেন থেকে ট্র্যাকে পড়ে না যান, তার জন্যই নতুন ডিজ়াইনের লোকাল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল বোর্ড। সোমবার প্রবল ভিড়ের চাপে মুম্বইয়ের শহরতলিতে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে চার যাত্রীর। জখমও হয়েছেন কয়েকজন।
সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিলেন রেলকর্তারা। রেলের রোলিং স্টক বিভাগের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, নতুন ডিজ়াইনের ট্রেন নভেম্বরেই তৈরি হয়ে যাবে। ২০২৬–এর জানুয়ারিতে যাত্রীরা ওই ট্রেনে চড়া শুরু করবেন। প্রাথমিক ভাবে মুম্বইয়ের শহরতলিতে এমন ট্রেন চালানো শুরু হলেও পরে দেশের যে যে শাখার লোকালে যাত্রীদের ভিড় খুব বেশি, সেই সব শাখায় এমন ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
নতুন এই নন–এসি লোকালের ডিজ়াইন কেমন হতে যাচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে রেল জানিয়েছে, এই ট্রেনের কামরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় স্লাইডিং দরজা। লোকালে দরজা খোলা থাকায় কামরার মধ্যে হাওয়া ঢোকায় সমস্যা ছিল না। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ বার থেকে যদি কামরার দরজা বন্ধ রাখা হয়, তা হলে কামরায় স্বাভাবিক ভাবেই দম আটকানোর মতো পরিবেশ তৈরি হবে।
এমনটা যাতে না হয়, সে জন্য প্রতিটি কামরার ছাদে একটি ভেন্টিলেশন ইউনিট বসানো হবে। সেখান থেকে তাজা হাওয়া কামরার মধ্যে পাম্প করে ঢোকানো হবে। এ ছাড়াও এক কামরা থেকে অন্য কামরায় যাওয়ার ভেস্টিবিউলগুলো খুলে দেওয়া হবে। এই পরিবর্তনের কাজ খুব দীর্ঘমেয়াদি নয়। কারণ এমনিতেই লোকাল ট্রেনে পাশাপাশি খোলা স্লাইডিং দরজাই থাকে। সেই দরজাই স্বয়ংক্রিয় করা হবে।
মুম্বইয়ের শহরতলিতে চলা লোকাল ট্রেন তার ভিড়ের জন্য কুখ্যাত। তবে শুধু মুম্বই নয়, দেশের অন্যতম মেগাসিটি কলকাতা ও তার সংলগ্ন শহরতলি এলাকার লোকাল ট্রেনেও প্রতিদিন প্রবল ভিড় হয়। পূর্ব রেলের বাণিজ্য বিভাগের কর্মীরা জানাচ্ছেন, শিয়ালদহ স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ১৪–১৫ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন শাখার লোকালেও যাত্রীদের চাপ অত্যন্ত বেশি। পূর্ব রেলের সমীক্ষা অনুযায়ী শিয়ালদহ মেন লাইন (শিয়ালদহ–নৈহাটি), শিয়ালদহ–বনগাঁ, শিয়ালদহ–ডায়মন্ড হারবার, সোনারপুর–ক্যানিং এবং বারুইপুর–নামখানা শাখার লোকালে যাত্রীদের বাদুড়ঝোলা ভিড় নিত্যদিনের ঘটনা।
তাই মুম্বই দিয়ে শুরু হলেও আগামী দিনে এমন ট্রেন শিয়ালদহ ডিভিশনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ভারতীয় রেলের রোলিং স্টক বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা জানাচ্ছেন, লোকাল ট্রেনে স্বয়ংক্রিয় দরজার প্রয়োগ খুব সহজ হবে না। মেট্রোয় সামান্যতম বাধা পেলেই দরজা বন্ধ হয় না। লোকালেও যদি তেমন হয়, তা হলে ট্রেন চালানোই যাবে না। কাজেই সব রকম অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই ডিজ়াইন করা হবে।