উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল: শিশুর চিকিৎসা না করে ফোনে ব্যস্ত ডাক্তার-নার্স! অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য
বর্তমান | ১১ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: আট মাসের এক শিশুকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ উঠল চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের এই ঘটনায় শিশুর পরিবারের লোকেরা চিকিৎসার নামে হয়রানি ও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করারও অভিযোগ তোলেন।
ফুলবাড়ির ব্যাটালিয়ন মোড় সংলগ্ন বাসিন্দা পম্পি রায় চৌধুরী বলেন, এদিন দুপুরে আমার বোন তার আট মাসের মাসের ছেলেকে খাওয়াচ্ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ভাগনে। শ্বাসকষ্টে শরীর ছেড়ে দেয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। সেখানে চিকিৎসকরা না দেখেই আমাদের শিশু বিভাগে পাঠিয়ে দেন। দেরি না করে শিশু বিভাগে ভর্তি করে নেওয়া হয় এবং জরুরি বিভাগের কাউন্টার থেকে টিকিট করে নিয়ে আসতে বলে। আমাদের শিশুর অবস্থা তখন ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা বারবার ওয়ার্ডের নার্স ও ডাক্তারদের চিকিৎসা শুরু করতে বলি। কিন্তু তাঁরা চিকিৎসা না করে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা সেই ঘটনা আমাদের মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করি। তা দেখে নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে তেড়ে আসেন এক নার্স। মোবাইল কেড়ে নিয়ে সেই ভিডিও রেকর্ডিং ডিলিট করে আমাদের হুমকি দিয়ে বলা হয়, পুলিস বা যাকে খুশি গিয়ে বল, কোনও লাভ হবে না। এদিকে, ভাগনের চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় ক্রমশ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল। আমরা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ওকে নিয়ে চলে আসি। পরে বাইরে প্রাইভেট চেম্বারে ডাক্তার দেখাই।
এ ঘটনায় ফের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগ সহ বিভিন্ন বিভাগে কিছু ডাক্তার ও নার্সের রোগী না দেখে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ উঠল। প্রায় দু’মাস আগে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল এক রোগীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুতে। পরপর এমন ঘটনায় মেডিক্যালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে রোগীর পরিজনদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একেতে মেডিক্যালে দালালচক্র সক্রিয় বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ ওঠে। এমনকী হাতেনাতেও দালাল ধরেছে কর্তৃপক্ষ। তারপর এভাবে চিকিৎসা না করে রোগীকে ফেলে রাখার ঘটনায় রোগীর পরিজনদের মধ্যে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। যার ফলে রোগীকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার নামে ওই চক্র ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নার্সিংহোমে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাডিশনাল সুপার ডাঃ নন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এ ধরনের কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা দেখা হবে, সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছে কি না। যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। রোগীর পরিবারের লোকেরা লিখিত অভিযোগ জানালে আমাদের কাজে সুবিধা হবে।