• উত্তরবঙ্গের নদীগুলি নিয়ে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় স্তরে নির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ প্রয়োজন
    বর্তমান | ১১ জুন ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: উত্তরবঙ্গে তো শুধু তিস্তা তোর্সা, মহানন্দা, জলঢাকা নয় আট জেলাজুড়ে অসংখ্য নদী, শাখা নদী রয়েছে। এছাড়াও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে খাল, বিল, পুকুর, জলাশয়। উত্তরে যে হারে গরম বাড়ছে, নদী জলের অপ্রতুলতা দেখা দিচ্ছে, তার প্রভাব নদী পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙন যেমন দিনদিন বাড়ছে তেমনি নদীর বেড উঁচু হয়ে যাওয়া, নদীর মাঝে চাষাবাদ, অসংখ্য নদী বাঁধ, ড্যাম নির্মাণ, নিরন্তর নদীর জল নিয়ন্ত্রণের কারণে নদী তার স্বাভাবিকত্ব হারাচ্ছে ও মাঝেমাঝেই গতিপথ পরিবর্তন করছে। তার ফলাফলও হচ্ছে ভয়াবহ। পাশাপাশি নদীর চর, বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বসবাস বৃদ্ধির ফলেও নদীর ক্ষতি হচ্ছে। 

    একদিকে হিমবাহের পিছিয়ে যাওয়া, পাহাড়ি এলাকায় দ্রুত উন্নয়ন, পরিবেশের পরিবর্তনে নদীর উপরে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বর্ষার সময় ছাড়া উত্তরের অধিকাংশ নদীতে জল থাকছে না। এতে চাষাবাদ থেকে শুরু করে অরণ্যেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। কিন্তু এসবের পরও কোথাও তো একটা আশার আলো থাকবে! কী করলে আসন্ন এই সঙ্কট থেকে উত্তরের নদী, অরণ্য, বন্যপ্রাণ, কৃষি, শিল্প, পরিবেশ ও সর্বোপরি মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের দাবি, উত্তরের নদীর বিষয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন। তাহলে নদীর বিষয়ে সুদূরপ্রসারী কোনও নীতি নির্মাণ করা সম্ভব হবে। তাহলেই নদীকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

    উত্তরবঙ্গের পরিবেশবিদ তুহিনশুভ্র মণ্ডল বলেন, আগামী দিনে উত্তরবঙ্গের শতাধিক নদীর অবস্থা বিপজ্জনক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তিস্তার জলপ্রবাহ এখন‌ নিয়ন্ত্রিত। ঘন ঘন গতিপথ পরিবর্তনের কারণে তিস্তায় ভাঙন প্রবল। কিছু কিছু জায়গায় নদী খাত উঁচু হয়েছে। সঙ্কোশ, রায়ডাক, তোর্সা, জলঢাকা, মহানন্দার প্রবাহের গতিপ্রকৃতি চিন্তার বিষয়। আবার দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী, পুনর্ভবা, টাঙ্গনের জল নিয়ন্ত্রণ করছে প্রতিবেশী দেশ‌। ফলে উত্তরের নদী মরে যাচ্ছে। নদীর বুকে নতুন নতুন চর জাগছে। এখনই উত্তরের নদীগুলি নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি তৈরি না হলে নদীর‌ আর ভূগোল থাকবে না, ইতিহাস হয়ে যাবে। বড় নদীর পাশাপাশি মানসাই, সুটুঙ্গা, আমতলা, সুধানি, ডক, ব্রাহ্মণী, ইছামতি, যমুনার মতো ছোট নদীর কথাও ভাবতে হবে। ছোট নদীগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সংযোগকারী খাল বিলগুলি সংস্কার করতে হবে।

    ১৮৩৯ সাল নাগাদ অসমে প্রথমে চা বাগান স্থাপনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের নামে বাণি঩জ্যিক পদক্ষেপ করেছিল। তারপর থেকে ব্রিটিশ ভারতেই চা বাগানের বিস্তার উত্তরের জেলাগুলিতে ছড়িয়েছিল। সেসময় থেকেই জঙ্গল কাটা, রেললাইন স্থাপনের হাত ধরে আজও উত্তরের এই ভূমিতে তথাকথিত উন্নয়ন হয়েই চলেছে। পরবর্তীতে দেশভাগ। ব্যাপকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই অঞ্চলের নদী, অরণ্য, পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলেছে। আর তার উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের করাল প্রভাব তো রয়েইছে। সব মিলিয়ে ভালো নেই উত্তরের এই নদী, এই অরণ্য, 

    এই দেশ।
  • Link to this news (বর্তমান)