আবার লজ্জা ভারতীয় ফুটবলে, র্যাঙ্কিংয়ে ২৬ ধাপ পিছনে থাকা হংকংয়ের কাছেও হার সুনীলের ভারতের
আনন্দবাজার | ১০ জুন ২০২৫
হংকংয়ের কাছে হেরে গেল ভারত। এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের লড়াইয়ের ফল ভারতের পক্ষে ০-১। ৫৮ মিনিটের মাথায় সুনীল ছেত্রী নেমেও দলকে জয়ের রাস্তা দেখাতে পারলেন না। ভারতকে হারতে হল গোলরক্ষক বিশাল কাইতের ভুলে। ভারতকে হারিয়ে ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘সি’র শীর্ষে উঠে এল অ্যাসলে ওয়েস্টউডের দল।
হংকং ম্যাচের আগে সুনীলদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। মঙ্গলবারের ম্যাচ জিততে পারলে জাতীয় দলকে ৪২ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে জয়ের মুখ দেখা হল না মানোলো মার্কেজ়ের। ফিফা ক্রমতালিকায় ২৬ ধাপ পিছিয়ে থাকা হংকংয়ের কাছে ০-১ ব্যবধানে ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে হল সুনীলদের। সংযুক্ত সময়ে (৯০+৪) পেনাল্টি থেকে গোল খেয়ে হেরে গেল ভারতীয় দল। একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে হংকংয়ের উদেবুলজ়োরকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন বিশাল। রেফারি ভারতের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দেন। তা থেকে ম্যাচের একমাত্র এবং হংকংয়ের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করতে ভুল করেননি পেরেইরা। বিশালের ডান দিক দিয়ে নিচু এবং জোরালো শোট মারেন তিনি। বিশাল অবশ্য বাঁ দিকে ঝাঁপিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়ার পর আর সমতা ফেরানোর সময় পায়নি ভারতীয় দল।
দিনকয়েক আগেই ৪০ বছরের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো পর্তুগালকে নেশনস লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। ৪০-র সুনীলের কাছ থেকেও তেমন কিছুই প্রত্যাশা করেছিলেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরা সুনীল শুধুই অতীতের ছায়া। তাঁর ধার কমে যাওয়া দক্ষতার উপর মার্কেজ় একটু বেশিই নির্ভর করে ফেলছেন। তাতেই ডুবছে ভারতীয় দল।
কোওলুনের কেই টাক স্পোর্টস পার্কের মাঠে সুনীলকে প্রথম একাদশে না রেখেই দল নামিয়েছিলেন ভারতীয় দলের কোচ। তাতে অবশ্য লাভ কিছু হয়নি। হংকংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে দিশাহীন দেখিয়েছে ভারতীয় ফুটবলারদের। মাঝমাঠ এবং রক্ষণের ভুল বোঝাবুঝিতে ৩ মিনিটের মাথাতেই গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল হংকং। সহজ সুযোগ নষ্ট করে তারা। ভারতীয় দলের রক্ষণ এ দিন বার বার চাপে পড়েছে। চাপের মুখে ক্রমাগত ভুল করেছেন সন্দেশ জিঙ্ঘন, আনোয়ার আলিরা।
গোল করার মতো প্রথম সুযোগ ভারতের সামনে আসে ১৫ মিনিটে। ফ্রিকিক থেকে ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ়ের ক্রস বক্সের মধ্যে পান সন্দেশ। কিন্তু তিনি অফসাইডে ছিলেন। প্রথম ২০ মিনিট দু’দলই কিছু এলোমেলো ফুটবল খেলেছে। পরিকল্পনার অভাব ছিল স্পষ্ট। তার পর ধীরে ধীরে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন ওয়েস্টউডের দল। ভারতও প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে শুরু করে। কিছুটা হলেও উপভোগ্য হয়ে ওঠে লড়াই। এর মধ্যে ৩৫ মিনিটের মাথায় সহজ সুযোগ নষ্ট করেন আশিক কুরিয়ন। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে হংকংয়ের বক্সের মাথায় চলে আসেন ব্রেন্ডন। তিনি বাঁ দিকে বল দেন লিস্টন কোলাসোকে। লিস্টন নিচু ক্রস করেন। গোলের সহজ সুযোগ পেয়েও অবিশ্বাস্য ভাবে নষ্ট করেন কুরিয়ন। মূলত বাঁ পায়ের ফুটবলার কুরিয়ন ডান পায়ে শট নিতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান! গোল শূন্য অবস্থায় প্রথমার্ধের খেলা শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে দু’পক্ষই একাধিক সুযোগ নষ্ট করে। ভারতীয় দল ভুগল ফিনিশিংয়ের অভাবে। বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে ভারতীয় দল। অথচ এই হংকংকেই বছর তিনেক আগে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত।
ওয়েস্টউড এক সময় বেঙ্গালুরু এফসির কোচ ছিলেন। সুনীলদের খেলা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে তাঁর। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়েছে হংকং। এ দিনের ম্যাচ বুঝিয়ে দিল, ভারতীয় দল কোথায় কোথায় পিছিয়ে। হংকংয়ের কাছে হেরে গ্রুপ ‘সি’তে আপাতত সকলের শেষে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন সুনীলেরা।