• সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক থেকে অভিযুক্তদের সম্পর্কে সূত্র মিলতে পারে, বাঁকড়া-কাণ্ডে ফ্ল্যাট তল্লাশির আর্জি পুলিশের
    আনন্দবাজার | ১০ জুন ২০২৫
  • হাওড়ার বাঁকড়ার ফকিরপাড়ায় যে ফ্ল্যাটে তরুণীকে আটকে রেখে শারীরিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল, সেই ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে তল্লাশি করতে চাইছে পুলিশ। এ জন্য সোমবার পুলিশের পক্ষ থেকে হাওড়া আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই তালাবন্ধ ঘরে থাকা সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক থেকে পলাতক অভিযুক্তদের সম্পর্কে সূত্র মিলতে পারে। ওই ফ্ল্যাটে তরুণীকে করা অত্যাচারের কোনও প্রমাণ মেলে কিনা, তা-ও দেখা হবে।

    উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই তরুণীর অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসতেই বেপাত্তা হয়ে যায় ওই পরিবারের সদস্যেরা। তিন দিন পরেও তাদের সন্ধান মেলেনি। পুলিশ জানায়, ওই ফ্ল্যাটের চারপাশে ও রাস্তায় ৪-৫টি ক্যামেরা লাগিয়েছিল ওই ফ্ল্যাটের মালকিন তথা তরুণীকে অত্যাচারে মূল অভিযুক্ত মহিলা। তদন্তকারীরা ওই সব ক্যামেরার ফুটেজ থেকে জানার চেষ্টা করবেন, ওই ফ্ল্যাটের মালকিন, তার ছেলে ও সঙ্গে থাকা একটি মেয়ে কখন, কী ভাবে পালিয়েছে।

    প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ অবশ্য জানিয়েছিল, এলাকার অন্য সিসি ক্যামেরা থেকে তেমন কিছু তথ্য মেলেনি। এলাকার লোকজনও দেখেননি ওই পরিবারটি কখন ফ্ল্যাট বন্ধ করে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। তবে তদন্তকারীদের ধারণা, পরিবারটি বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই পালিয়েছে। কারণ অভিযুক্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, রাতারাতি সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সামান্য কিছু টাকা পড়ে রয়েছে অ্যাকাউন্টে।

    পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফকিরপাড়ার ওই পরিবারের বিষয়ে একাধিক সূত্র মিলেছে। বিশেষত জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ওই তরুণী জানান, ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কয়েক মাস আগে ওই যুবকের গাড়ি করে মানালিও বেড়াতে যান তিনি। কার্যত পরিবারের সদস্যের মতো হয়ে যাওয়ায় এবং রিলস বানানোর সময়ে ওই যুবক এবং তার মায়ের সব কীর্তিকলাপ তরুণী জেনে ফেলেছিলেন।

    তদন্তকারীদের অনুমান, এটাই ওই তরুণীর জন্য কাল হয়ে গিয়েছিল। ওই পরিবারের সদস্যদের চরম আক্রোশের মুখে পড়েন তিনি। তদন্তকারীদের তরুণী জানিয়েছেন, ওই যুবকের মা তাকে জোর করে আটকে রেখে দিনের পর দিন লোহার রড,হামানদিস্তা, কোদালের বাট দিয়ে মারধর, আগুনের ছেঁকা, যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন।

    তবে শুধু ওই তরুণীই নয়, ওই মহিলার প্রাক্তন স্বামী শেখ মোরসেলিমও সোমবার তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এ দিন বাঁকড়ায় ওই মহিলার স্বামী বলেন, ‘‘ওর জন্য আমার পরিবারটা তছনছ হয়ে গিয়েছে। আমার মা, বা, ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার অত্যাচারে। আমাকেও মেরে ঘর থেকে বার করে দিয়ে পুরো সম্পত্তি ভোগদখল করছে। ২০১৫ সালে আমাদের জমি, বাড়ি দখল করার জন্য নিজে গুন্ডা নিয়ে এসে গুলিও চালিয়েছে।’’

    এ দিনও বাঁকড়ার ফকিরপাড়ার সঙ্কীর্ণ গলির মধ্যে তৈরি হওয়া চারতলা ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় বাসিন্দাদের জটলা। তাঁদের আলোচনার কেন্দ্রে চারতলা বাড়িটির তালাবন্ধ দোতলার ফ্ল্যাটটি। রাস্তা থেকে দেখা গিয়েছে, ফ্ল্যাটটির সব জানলা খোলা। সম্ভবত তাড়াহুড়ো করো পালাতে গিয়ে জানলা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। সকলেরই দাবি, অবিলম্বে ওই মহিলা-সহ পরিবারটিকে গ্রেফতার করা হোক। এলাকার বাসিন্দা পান্না গাজি বলেন, ‘‘মহিলার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবে পাড়ার অন্তত ৫০-৬০ জনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে রেখেছে। এমনকি যে ফ্ল্যাটে ভাড়া আছে, সেই ফ্ল্যাটের ভাড়া ১৪ বছর ধরে দেয়নি। ফ্ল্যাটের মালিকের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা করে রেখেছে। অবিলম্বে ওই মহিলা-সহ পরিবারের সকলকে গ্রেফতার করতে হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)