‘এই আমাদের মেয়ে!’ যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না মা-বাবার। সেই দশ বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিল সুকন্যা (নাম পরিবর্তিত)। তারপর কেটে গিয়েছে সাড়ে সাত বছর। মেয়ে কত বড় হয়ে গিয়েছে। হারানিধি খুঁজে পেয়ে আবেগ বাঁধ মানছে না তাঁদের।
মঙ্গলবার বিকেলে সুকন্যাকে তার মা-বাবার হাতে তুলে দেন মেদিনীপুর জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস। মেয়েকে দেখা মাত্র বাবার চোখে জল। কান্না বাঁধ মানছে না মায়েরও। সুকন্যা বিশেষভাবে সক্ষম। তবে আপনজনকে ফিরে পাওয়ার খুশিতে তার চোখে-মুখেও অন্য আভা। এ যেন পুনর্মিলন।
জেলা প্রশাসন ও পরিবার সূত্রে খবর, বছর আটেক আগে হঠাৎই নিজের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় সুকন্যা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তাকে উদ্ধার করে চাইল্ড লাইন বা শিশু সুরক্ষা দপ্তরের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। সুকন্যা মূক ও বধির। নিজের নাম, পরিচয় কিছুই বলতে পারেনি।
সুকন্যাকে রাখা হয় খড়্গপুর-২ নং ব্লকের মাদারচক নবোদয় কিশলয় সংঘ হোমে। জেলার এই হোমে কেবলমাত্র বিশেষভাবে সক্ষম মেয়েরাই থাকে। সেখানে শুরু হয থেরাপি। সঙ্গে স্পেশাল এডুকেটররা পড়াশোনা, হাতের কাজ শেখাতে শুরু করেন। সুকন্যার মানসিক বিকাশ হয়। কিছুটা লিখতে পড়তেও শেখে। কিন্তু তার পরেও নিজের নাম-পরিচয় জানাতে পারছিল না কিছুতেই।
গত মে মাসে যেন চমৎকার হলো। আচমকাই খাতা টেনে নিয়ে বাবার নাম লিখে ফেলে সুকন্যা। সঙ্গে বাড়ি ঠিকানাও। অবাক হয়ে যান সকলে। পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা ওই গ্রামের সন্ধান করতে শুরু করেন। তাঁরা জানতে পারেন, সুকন্যার বাড়ি ডেবরা ব্লকের ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। খোঁজ মেলে তার মা-বাবারও। হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের মেয়ের ছবি দেখান। মা-বাবা মেয়েকে চিনতে পারবে না তা কখনও হয়?
জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস বলেন, ‘শুধু মূক ও বধির নয়, মাল্টিপিল ডিসঅর্ডার ছিল মেয়েটির। দীর্ঘ থেরাপিউটিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুকন্যা শারীরিক ও মানসিকভাবে এখন অনেকটাই সুস্থ। গত ২০ মে হঠাৎই মা-বাবার নাম লিখে ফেলে খাতায়। সবকিছু খতিয়ে দেখে মঙ্গলবার মেয়েটিকে পরিবারের হাতে তুলে দিলাম আমরা।’ এ দিন তিনিও আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ থেমে বললেন, ‘এগুলোই তো আমাদের স্বার্থকতা, ভালোলাগা।’